ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাপের কামড়ে বছরে মৃত্যু সাড়ে ৭ হাজার

এ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ অপ্রতুল, দংশিত যায় ওঝার কাছে

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২৮ জুন ২০২০

এ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ অপ্রতুল, দংশিত যায় ওঝার কাছে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। এর মধ্যেই বগুড়া সিরাজগঞ্জ পাবনায় সাপের কামড়ে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে সাপের বিষক্ষয় প্রতিষেধক (এ্যান্টিভেনম ইনজেকশন) সরবরাহ খুবই অপ্রতুল। উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ নেই। অবিষধর সাপের কামড়ে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে অবিষধর সাপের প্রজাতি বেশি, এমনটি জানিয়েছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আবু সাঈদ। বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বাড়ে। সর্প দংশন বেড়ে যায়। বেশিরভাগ শিকার গ্রামের মানুষ। অন্যতম কারণ, সাপের আবাসস্থল ভেঙ্গে গড়ে উঠছে ভৌত অবকাঠামো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বাংলাদেশের ৬ লাখেরও বেশি মানুষকে সাপ দংশন করে। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার জন মারা যায। দেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ করা হয়। তবে দূরের রোগীরা দ্রুত এসব হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় বাঁচানো সম্ভব হয় না। মাঠ পর্যায়ের হাসপাতালে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে) এ্যান্টিভেনাম সরবরাহ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র জানায়, আগামী ৫ বছরের মধ্যে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর আওতায় এ্যান্টিভেনাম দেশেই তৈরি হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আবু সাইদ বলেন, বিশ্বে ৩ হাজার প্রজাতির সাপ আছে। বাংলাদেশে আছে একশ’ প্রজাতির সাপ। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির বিষধর। বাকি ৬৮ প্রজাতি বিষধর নয়। দংশনের পাশাপাশি সাপ পরিবেশও রক্ষা করে। বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামির হোসেন মিশু জানালেন, বগুড়ায় উপজেলা পর্যায়ে কোন হাসপাতালে এ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন সরবরাহ নেই। সাপে কাটা রোগীদের বিষক্ষয়ের ব্যবস্থা আছে এ বিষয়টি লোকজন জানে। তবে কোন ধরনের সাপ দংশন করেছে তা সহজে জানা সম্ভব না হওয়ায় রোগীর সঠিক চিকিৎসা হয় না। বগুড়ার সিভিল সার্জন মোঃ গওসুল আজিম চৌধুরী জানালেন, বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে সীমিতসংখ্যক এ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন আছে। এই ইনজেকশন প্রয়োগে প্রশিক্ষত ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন। কারণ সর্প দংশনের রোগীকে ইনজেকশন প্রয়োগের পর পাশ্বর্প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরী ফলোআপের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। বগুড়া শজিমেকের অধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল জানান, সাপে কাটা রোগী সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছুলে দংশিত স্থানে বাঁধা থাকলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এ্যন্টিভেনাম প্রয়োগে রোগী দ্রুত সেরে ওঠে। ডাঃ সামির হোসেন মিশু জানান, উপজেলা হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও গড়ে তোলা যায়নি। কয়েকটি উপজেলা হাসপাতালে এ্যান্টিভেনাম পাঠিয়ে দেখা গেছে ব্যবহার না হওয়ায় ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা এ্যান্টিভেনামের মেয়াদ থাকে দুই বছর।
×