ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইন কেনাকাটায়ও চলছে প্রতারণা

করোনা সঙ্কটের সময় সাইবার অপরাধ বেড়েছে

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৮ জুন ২০২০

করোনা সঙ্কটের সময় সাইবার অপরাধ বেড়েছে

শংকর কুমার দে ॥ দেশে করোনা সঙ্কটের সময়ে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। করোনা এই সময়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগেই বেশি মামলা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রী, এমপি বা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নিয়ে মিথ্যা সংবাদ ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, চিকিৎসা নিয়ে সমালোচনা করা, ত্রাণ চুরির মিথ্যা খবর পরিবেশন করা, ধর্মের অবমাননা, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি প্রভৃতি কারণে মামলা হচ্ছে। ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস ও লিংক শেয়ারের পাশাপাশি তারা করোনা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়েও প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী এখন ঘরে থাকছে অধিকাংশ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তাদের বেশিরভাগ সময় কাটছে। এরই মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাইবার অপরাধীরাও। ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসএ্যাপ, ভাইবার ও টুইটার এ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে সাইবার অপরাধী চক্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কিছু প্রতারকের আবির্ভাব এবং ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ঠেকানো। এছাড়া ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় অনেক ক্ষেত্রে পার পেয়ে যাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে ডিজিটাল আইনের মামলার সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ডিজিটাল আইনে মামলায় ৫২ জন গ্রেফতার হয়েছেন। চলতি বছরের ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮টি। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। এর মধ্যে মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ২৪, মে’তে ৩১ এবং জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২১ মামলা হয়েছে। এসব মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি। ২০১৮ সালে ডিএসএ এবং আইসিটি এ্যাক্ট মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৭১। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এক বছরে মোট মামলা হয়েছে ৬৩। আর সেখানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই মামলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি, ১০৮। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ অনেক মামলার খবরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় না। তাই মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তার খোঁজ পায় না। ফলে তাদের সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। দেশে একটি মাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আছে ঢাকায়। ডিজিটাল এবং তার আগের আইসিটি আইনের সব মামলার হিসাব আছে সেখানে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে মোট ৩২৭টি। জানুয়ারি মাসে মোট মামলা হয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে থানায় ৪১টি এবং আদালতে ৪৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসে হয়েছে ১১৯টি মামলা। থানায় ৯৫টি এবং আদালতে ৩৪টি। মার্চ মাসে মামলা হয়েছে ১২২টি। এর মধ্যে থানায় ৭৫টি এবং আদালতে ৩৭টি। ২০১৯ সালে মোট মামলা হয়েছে এক হাজার ১৮৯টি। এর মধ্যে থানায় ৭২১টি এবং আদালতে ৪৬৮টি। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫৫০টির মতো মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিচারাধীন মামলা আছে এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯৫৫টি। এর মধ্যে থানায় দায়ের করা এক হাজার ৬৬৮টি এবং আদালতে ২৮৭টি। ৫৫টি মামলা হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে। সাইবার ট্রাইব্যুনালের মামলার সঙ্গে জড়িত পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইনজীবীরা জানান, করোনার সময় মামলা বেড়ে যাচ্ছে। মনিটরিং বাড়িয়ে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সাইবার অপরাধ আরও বাড়বে। ডিজিটাল আইনের ২৫, ২৮ ও ২৯ ধারায় মামলা বেশি হয়। এই ধারাগুলো মানহানি, ধর্মের অবমাননা এবং গুজব ছড়িয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করার অপরাধ। কিন্তু এসব অপরাধ সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা নেই। সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের তথ্য মতে, এই আইনে মামলার ৭৫ ভাগই নারী ভিকটিমদের করা। তবে তা আলোচনায় আসে না বা তাদের তথ্য প্রকাশ পায় না। তারা প্রকাশ করতেও চান না। বাকি মামলা রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের করা। তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা এমপিদের পক্ষ হয়ে অনেকেই মামলা করেন। সাইবার অপরাধের মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বলেন, এখানে জামিনেরও বিধান নেই। পুলিশও মামলা করতে পারে। বর্তমানে সবাই অনলাইনে বেশি সময় দিচ্ছে। ফলে সাইবার অপরাধীরা বিভিন্নভাবে তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে, বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি সাইবার বুলিং নিয়ে একটি গবেষণা করে দেখা গেছে, যারা বেশি সময় অনলাইনে কাটায় তারাই বেশি সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। অনেকেই অনলাইনে পণ্য অর্ডার দিচ্ছেন। ফলে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সুযোগ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যারা সাইবার ক্রাইম মনিটরিং করেন এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা ব্যস্ত রয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগীরা অনলাইনে দামি দ্রব্য কিনতে যায় না। তারা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে কেনাকাটা করে। যখন টাকাটা হারাচ্ছে তখন তারা আমাদের ফেসবুকে নক করছে, কিন্তু কেউ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যথাযথভাবে অভিযোগ করছে না। এই জায়গাতে একটা বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে আমাদের। এ বিষয়ে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছি। ভিকটিমওয়াইজ (ভুক্তভোগী) না এগিয়ে সাসপেক্ট ওয়াইজ (সন্দেহভাজন) আগাবার চেষ্টা করছি। কারণ একজন সাসপেক্টকে টার্গেট করলে সেখানে অনেক ভিকটিম পাওয়া যাবে। এজন্য ডেটাবেজও (উপাদান সংগ্রহ) করা হচ্ছে।
×