ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্ত সংগ্রহ-পরিসঞ্চালন

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৮ জুন ২০২০

রক্ত সংগ্রহ-পরিসঞ্চালন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ রোগটিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর বাইরেও যে লাখ লাখ রোগী রয়েছেন, যারা দীর্ঘকাল যাবত নানা অসুখে ভুগছেন, তাদের চিকিৎসাসেবা যেন গৌণ হয়ে উঠেছে। নতুন সংক্রামক ব্যাধি এসে অন্য সব ব্যাধিগ্রস্ত মানুষকে কিছুটা বিপদ ও ঝুঁকির মধ্যেই ফেলে দিয়েছে। সম্প্রতি রক্ত সংগ্রহেও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যাওবা সংগৃহীত হচ্ছে তা পরিসঞ্চালনে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। ফলে জরুরীভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন এমন লাখ লাখ রোগী বিরাট ঝুঁকিতে রয়েছেন। অনেকের রয়েছে মৃত্যুঝুঁকিও। করোনা মহামারীতে থেমে আছে প্রায় ৫ লাখ রোগীর দেহে রক্ত সঞ্চালন কার্যক্রম। নানা অজুহাতে এ ধরনের মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না। আছে যন্ত্রপাতির স্বল্পতা। পাওয়া যাচ্ছে না রক্তদাতা। কবে নাগাদ সারাদেশে রক্ত পরিসঞ্চালন সেট সরবরাহ হবে তার নিশ্চয়তাও মিলছে না। অনেকেই হাসপাতালের সামনে অপেক্ষায় থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। এতে যাদের রক্ত পরিসঞ্চালন প্রয়োজন এমন রোগীর জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রায় দুই লাখ প্রসূতি মা, এক লক্ষাধিক বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার রোগী আছেন। এছাড়া এক লাখের বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী, প্রায় অর্ধলক্ষ কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত মানুষ রয়েছেন। এদের জীবন বাঁচাতে রক্তদানের কোন বিকল্প নেই। প্রায় প্রত্যেক মায়েরই প্রসবকালীন সময়ে রক্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। কিন্তু সরকারী হাসপাতালগুলোতে এ সংক্রান্ত সেবা সরঞ্জামের সঙ্কট থাকায় মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে অনেক প্রসূতি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অন্তঃসত্ত্বাকালীন শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নারী রক্তশূন্যতায় ভোগেন। দেশে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ। শতকরা ৩১ ভাগ মা এ কারণে মারা যান। ব্লাড ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রক্ত গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। করোনাকালে রক্তদান কর্মসূচীতে বিশেষ অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে স্বেচ্ছায় রক্ত দেন ৪৫০ জন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাত্র তিনজন। রক্তদাতাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী বলছে, বছরে মোট চাহিদার ৬০ ভাগ রক্ত পাওয়া যায়, ঘাটতি থাকে ৪০ ভাগ। দেশে প্রতিবছর ১৩ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদার মধ্যে রক্ত না পেয়ে মারা যান প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ। তাই রক্তদানের জন্য আহ্বান জানাতে হবে ব্যাপকভাবে। তা না হলে প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ব্লাড ব্যাংকে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেবে। তাই অচিরেই গণমাধ্যমে রক্তদানের আহ্বান সংবলিত প্রচারণা প্রয়োজন। ভার্চুয়াল মাধ্যমেও এ নিয়ে আলোকপাত হওয়া জরুরী। এরপর রয়েছে রক্ত পরিসঞ্চালনে সরঞ্জামাদির অভাবের বিষয়টি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য চলমান সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সুতরাং অবশ্যই তাদের জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু এখন সবকিছুর আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। চাই দ্রুত পরিস্থিতির উন্নয়ন প্রয়োজন। এজন্য আর এক মুহূর্তও বিলম্ব নয়। আজই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া চাই। আর কোন অজুহাত প্রত্যাশিত নয়। মনে রাখা চাই সব কিছুর বিকল্প মিললেও রক্তের কোন বিকল্প হয় না। তাই জরুরীভিত্তিতে যেসব সঙ্কটাপন্ন রোগীর রক্তের প্রয়োজন তাদের দেহে রক্ত সঞ্চালনের সুব্যবস্থা করতে হবে এখনই।
×