ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায়ও রিজার্ভে রেকর্ড

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৮ জুন ২০২০

করোনায়ও রিজার্ভে রেকর্ড

একই মাসে দুটো কৃতিত্ব অর্জন করার অধিকারী হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। জুনের ৩ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে ছিল ৩৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, তা ২৪ জুন অতিক্রম করে গেল ৩৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫০৯ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর এই দুঃসময়েও এটি একটি অনন্য অর্জন বৈকি। বর্তমান ক্রান্তিকাল তথা দুঃসময়ে এই রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই স্থান করে দিয়েছে বাংলাদেশ। তদুপরি এই পরিমাণ রিজার্ভ পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় ধরে এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে অন্তত সাড়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ অর্থ মজুদ থাকতে হয়। সেদিক থেকে করোনার বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। অবশ্য রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কষ্টার্জিত প্রেরিত অর্থ, যা বলতে হবে বিস্ময়কর। করোনার এই ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকালেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও বলিষ্ঠ করতে ইতিবাচক অবদান রাখতে সমর্থ এবং সক্ষম হচ্ছেন। এর পাশাপাশি অবশ্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফের কিছু ঋণ সহায়তাসহ অনুদানও রয়েছে। তদুপরি রয়েছে কম আমদানি ব্যয়। বিশেষ করে খাদ্যে প্রায় স্বনির্ভর হওয়ার কারণে আপাতত আমদানি ব্যয় পরিশোধে তেমন চাপ নেই। তবে আগামীতে রফতানি আয় বাড়াতে না পারলে রিজার্ভের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কষ্টকর হতে পারে। পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট রফতানিকারকরা সেক্ষেত্রে সরকারী প্রণোদনা এবং ঋণ সহায়তা কাজে লাগিয়ে রফতানি সহায়তা বাড়াতে সক্ষম হবেন বলেই প্রত্যাশা। এবার অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। করোনাভাইরাসজনিত সঙ্কটে যখন দেশে-বিদেশে অর্থনীতির চাকা প্রায় স্থবির, আমদানি-রফতানি ঠেকেছে তলানিতে এবং পোশাক ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি রয়েছে রীতিমতো হুমকিতে, তখন এর চেয়ে আশা জাগানিয়া খবর আর কি হতে পারে? বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৮ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৭৪৫ কোটি ডলার (১৭.৪ বিলিয়ন) রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতিসহ জাতীয় অর্থনীতিও যখন ঝুঁকির মুখে তখন সরকারসহ জনসাধারণের মুখে নিঃসন্দেহে ব্যাপক প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়েছে প্রবাসী আয়। এক্ষেত্রে অবশ্য সরকারের গত বছর থেকে প্রবাসী আয়ে নগদ ২ শতাংশ হারে প্রণোদনাও উৎসাহ জুগিয়েছে বৈকি। সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এতে বৈধ পথে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ বেড়েছে এবং অবৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে হয়রানিসহ বর্ধিত ব্যয় হচ্ছে না। অথচ করোনা মহামারীর কারণে বিপন্ন অর্থনীতিসহ তেলের দাম একেবারে কমে যাওয়ায় বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমূহ বিপদে রয়েছেন প্রবাসীরা। করোনা আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই হয়েছেন চাকরিচ্যুত। তবু প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই বহু কষ্টার্জিত অর্থের পরিমাণ অন্তত আগামী ঈদ-উল-আযহা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রিজার্ভ ধরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাজার থেকে আরও ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়াতে হবে, যাতে করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তা কাজে লাগানো যায়। তাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সতর্ক থাকতে হবে মুদ্রার মান সম্পর্কে। গ্রামীণ অর্থনীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতি যাতে শক্তিশালী হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রফতানি বৃদ্ধিসহ রেমিটেন্স প্রবাহ যাতে অব্যাহত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর।
×