ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে সব খাল সংস্কারে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৭ জুন ২০২০

রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে সব খাল সংস্কারে কাজ করছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার ঢাকা শহরের সকল খাল সংস্কার করে পর্যায়ক্রমে হাতিরঝিলের আদলে এনে খালগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। একইসাথে রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের বিভিন্ন নদ-নদী দখলমুক্ত করে এর পানি এর সংলগ্ন দুপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির সকল খাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেল ডিএনসিসির কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। আজ শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক বাস্তবায়িত ডিএনসিসি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কতৃক যৌথভাবে খখনকৃত সদ্য সমাপ্ত হজ্ব ক্যাম্প থেকে বনরুপা হাউজিং পর্যন্ত খননকৃত খালের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম,ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জাকিযা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী ঢাকা ও এর আশেপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগসহ বিভিন্ন নদ-নদী দখলমুক্ত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরে যে সকল খাল রয়েছে সেগুলো সংস্কার করে হাতিরঝিলের মত অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। মন্ত্রী বলেন,জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে যেমন জবাবদিহি করবেন কর্মচারিরাও তেমনি জবাবদিহি করবেন। আপনি মন্ত্রী হোন আর ছোট কর্মচারি হোন। ডিএনসিসি মেয়রের কাজের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, আজকে একটি নমুনা মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রদর্শন করেছেন। আমাদের অনেকে বলেছে কাজ করবেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাজ করে দেখিয়েছেন তিনি। এজন্য তিনি মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। তাজুল ইসলাম বলেন,ঢাকা শহরের খালগুলোকে একটির সাথে আরেকটির সংযোগ করিয়ে এগুলোকে ওযাটার ট্রান্সপোর্ট হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে পারলে ঢাকার সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমানে সকল জনপ্রতিনিধিদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যদি জনগণকে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতি এবং সংবিধানের মূলমন্ত্র অনুযায়ী কাজ করি তাহলে প্রধানমন্ত্রীর আভিষ্ট লক্ষ ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রুপান্তরিত করা তা সম্ভব হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশের উন্নয়নে যৌক্তিক এবং বিশ্বাসযোগ্য যে কোন নতুন প্রকল্প নিয়ে আসলে তাঁর মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে জনপ্রতিনিধিদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা,সততা এবং স্বচ্ছতার সাথে সময়মতো করতে পারলে সহজেই দেশের উন্নয়ন অর্জিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মের জন্য যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন দেখেন তা বাস্তবে রুপ দিতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান তিনি। অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন,ঢাকা উত্তরের সকল খাল ও ড্রেন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের বিদ্যমান জনবল, ভৌত অবকাঠামো, আনুষঙ্গিক সকল উপকরণসহ খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে হস্তান্তর করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএনসিসি মেয়র উদ্বোধনকৃত এ খালটির পাশাপাশি কুড়িল বিশ্বরোড থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সাইকেল লেন তৈরি করার প্রস্তাবও দেন। মেয়র বলেন, খালগুলো জেলা প্রশাসনের অধীনে, পানি নির্গমণসহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা শুনতে হয় সিটি কর্পোরেশনকে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে মেয়র ও কাউন্সিলরদেরকে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু ওযাসাকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয না।এমতাবস্থায়, নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে, ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের বিদ্যমান জনবল, যান-যন্ত্রপাতি, আনুষঙ্গিক সকল উপকরণসহ খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তাব দিচ্ছি। মেয়র আতিক অত্যন্ত দু:খ প্রকাশ করে বলেন, গত ২১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী,স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আমরা আশকোনা হজক্যাম্প সংলগ্ন জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করি। উত্তরা ৪নং সেক্টরের একাংশ, কসাইবাড়ি, আশকোনা, কাওলা এলাকার তীব্র জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আশকোনা হজক্যাম্প হতে বনরূপা আবাসিক এলাকা পর্যন্ত খালটির বিভিন্ন জায়গায় খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় উভয় সংস্থা অপরাগতা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে এই এলাকার দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুততম সময়ে কাজটি সম্পাদনের জন্য প্রায় ১ দশমিক ৯০ কিমি দীর্ঘ খালটি খননের জন্য যৌথভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয। ডিএনসিসি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩০ মে ২০২০ থেকে খাল খনন শুরু করে এবং ২৭ জুন ২০২০ খনন সম্পন্ন করে। ডিএনসিসি তার সীমিত জনবল এবং যান-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে শুণ্য দশমিক ১৭ কিমি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১ দশমিক ৭৩ কিমি সর্বমোট ১ দশমিক ৯০ কিমি খাল খনন করে। খালটি খননের ফলে উত্তরা ৪নং সেক্টরের একাংশ, কসাইবাড়ী, আশকোনা, কাওলাসহ আশেপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে দূর হবে। উল্লেখ্য, খাল খননের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে সর্বমোট ১ কোটি ৩৫ পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ইতিমধ্যে ৫০% টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। মেয়র বলেন,আমরা কথায় নয় কাজে বিশ্বাস করি, তার প্রমাণ আজকের এই খাল উদ্বোধন। গত ৩০ মে উদ্বোধনের সময় আমরা বলেছিলাম ২১ দিন সময প্রয়োজন, বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত ৭দিন সময় লেগেছে। আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, চলতি বছরে ডিএনসিসি কর্তৃক ৪ দশমিক ৭৫ কিমি সুপরিসর আরসিসি পাইপ-নর্দমা নির্মাণের মাধ্যমে উত্তরা ৪ এবং ৬নং সেক্টরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতাও অনেকাংশে দূর করা হচ্ছে। এছাড়া বনানী মেইন রোডে মাছরাঙ্গা টিভির সামনে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিমানবন্দর সড়কে বনানী ওভারপাস হতে কাকলী পর্যন্ত রিটেনশন পন্ড পূনরুদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া চলমান পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে এ এলাকার জলাবদ্ধতাও অনেকাংশে দূর করা সম্ভব হবে। মেয়র বলেন,মেট্রোরেল প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের ফলে ফার্মগেট থেকে পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত ডিএনসিসির বিদ্যমান প্রায় ২ দশমিক ২ কিলোমিটার ড্রনেজ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ ও অকার্যকর হওয়ায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ হতে অনেক দেরিতে সম্প্রতি ড্রেনেজ-লাইন পূনর্বাসন ব্যয় পাওয়া গেছে। কাজটি আগামী দুই মাসের মধ্যে ডিএনসিসি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেবে। এছাড়া মগবাজার প্রধান সড়কের রেলগেট হতে মধুবাগ পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার অনেক পুরানো, প্রায় অকার্যকর এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপরিসর পাইপ-নর্দমাটি পূনঃনির্মাণে ঢাকা ওয়াসা অপারগতা প্রকাশ করে। এ প্রেক্ষিতে ডিএনসিসি ১৯ কোটি প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২ দশমিক ৬৭ কিমি সুপরিসর আরসিসি পাইপ-নর্দমা নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করে। যার বাস্তবায়ন কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।
×