ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে গ্রামবাসীই নির্মাণ করল দুই কিমি সড়ক

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৭ জুন ২০২০

অবশেষে গ্রামবাসীই নির্মাণ করল দুই কিমি সড়ক

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২৬ জুন ॥ রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের নিচ তালিমপুর গ্রাম থেকে কাঁঠালগাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ করছেন গ্রামবাসী। সমাজের ধনী-গরিব মিলে নিজেরাই চাঁদা দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন তারা। রাস্তা নির্মাণে দীর্ঘদিনেও কেউ এগিয়ে না আসায় স্বেচ্ছাশ্রম ও নগদ অর্থ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেন গ্রামের লোকজন। জানা গেছে, রানীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত নিচ তালিমপুর গ্রাম। গ্রামের সঙ্গেই একাকার হয়ে আছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রাম। এই দুই গ্রাম মিলে প্রায় ৭শ’ পরিবারের বসবাস। গ্রাম থেকে মাঠের মধ্য দিয়ে জমির আইলের মতো একমাত্র সরু রাস্তা মিলিত হয়েছে আবাদপুকুর-বগুড়া রাস্তার চয়েনের মোড়ের পূর্ব দিকে কাঁঠালগাড়ী নামক স্থানে। দীর্ঘ দিন থেকে সরু রাস্তায় চলাচল করলেও রাস্তাটি পুরোপুরি নির্মাণ করার জন্য মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন ফল পায়নি গ্রামবাসী। বিগত ২০০৪ সালে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ থেকে ভ্যান চলার মতো মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও কেউ কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বর্ষার পানিতে আবারো জমির সঙ্গে মিশে আইলের মতো হয়ে গেছে রাস্তাটি। ফলে ওই গ্রাম দুইটি থেকে ধান, চালসহ কৃষিপণ্য ও বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে দুই কিলোমিটার রাস্তা পারি দিতে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। অবশেষে ভিক্ষুক, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, ধনী-গরিব মিলে ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে সামর্থ্য অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিজেরাই চাঁদা দিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এস্কেভেটর মেশিনের পাশাপাশি গ্রামের লোকজন মিলে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছেন। ওই গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আহাদ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাদা পানি পারি দিয়ে চলাচল করতে করতে জীবনটা কেটে গেল! কিন্তু আমাদের ভোগান্তি নিরসনে কেউ এগিয়ে এলো না। গ্রামের জিল্লুর রহমান, ছামসুজ্জামান, আমানুর রহমান স্বপন, মিজানুর রহমানসহ গ্রামবাসী জানান, গ্রাম থেকে বের হবার একমাত্র এই রাস্তা। সারাদেশে বিভিন্ন রাস্তাঘাট পাকাকরণ হলেও আমরা এমন দুর্ভাগা যে মাটি কেটেও কেউ রাস্তা নির্মাণ করে দেয়নি। ধান-চালসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহনে আমাদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ছেলেমেয়েরা বর্ষা মৌসুমে হাঁটু পানি ভেঙ্গে দুই কিলোমিটার রাস্তা পারি দিয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী মিলে টাকা তুলে নিজেরা শ্রম দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছি। রাস্তাটি পূর্ণ নির্মাণ ও পাকাকরণ করে দুই গ্রামের লোকজনের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। এ ব্যাপারে একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম বলেন, গত চার বছর আগে রাস্তাটির কিছুটা কাজ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় চার বার প্রকল্প আকারে দিয়েও কাজ হয়নি। তার পরেও চেষ্টা করছি রাস্তা নির্মাণ ও পাকাকরণের জন্য।
×