ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ায় বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলে দিশাহারা গ্রাহক

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৭ জুন ২০২০

কলাপাড়ায় বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলে দিশাহারা গ্রাহক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৬ জুন ॥ গ্রাহকের নাম কিংবা হিসাব নম্বর কোনটাই উল্লেখ নাইবা করলাম। তার মার্চ, এপ্রিল দুই মাসের সকল চার্জ মিলে বিদ্যুত বিল দেয়া হয়েছে ২৮৭ টাকা। আর শুধু মে মাসে মূল বিল দেয়া হয়েছে (অন্যান্য চার্জ ছাড়া) ২২৬৩ টাকা। এখানে বিদ্যুত খরচ দেখানো হয়েছে ৪০০ ইউনিট। এ গ্রাহকের মার্চ-এপ্রিলে সর্বোচ্চ বিদ্যুত খরচ দেখানো হয়েছে ৬০ ইউনিট। তিন মাসে মোট ৪৬০ ইউনিট খরচ করেছেন। যেখানে ফি মাসে গড়ে প্রায় ১৫৪ ইউনিট খরচ হয়েছে। যদি এভাবে তিন মাসে সমহারে ১৫৪ ইউনিটের বিদ্যুত বিল এ গ্রাহককে দেয়া হতো তাইলে তার ইউনিট খরচ দুই নম্বর ধাপে অর্থাৎ পাঁচ টাকা ৭২ পয়সা রেটে পরিশোধ করতে পারতেন। কিন্তু এক মাসে চার শ’ ইউনিট দেখিয়ে চার নম্বর ধাপের ছয় টাকা ৩৪ পয়সা রেটে বিল দেয়া হয়েছে। এ গ্রাহককে অন্তত ৬২ টাকার বেশি বিল দেয়া হয়েছে। একইভাবে আরেক গ্রাহক জানালেন, তাকে মার্চ/এপ্রিলে ১৬১৫ টাকার বিল দেয়া হয়েছে। একই বিলে মে মাসে দেয়া হয়েছে ২২৬৩ টাকার (মূল বিল)। সমুদয় আরও বেশি। এ গ্রাহকের দাবি যদি তাকে ব্যবহৃত তিনমাসের মোট ৬৯৫ ইউনিটের বিল সমহারে ২৩২ ইউনিট করে দেখানো হতো তাইলে চতুর্থ ধাপের ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা বেশি দিতে হতো না। গ্রাহকদের কমন অভিযোগ এভাবে পল্লী বিদ্যুত সমিতি প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে দুই মাসে অনুমাননির্ভর অধিক কম ইউনিট দেখিয়ে বিল করে পরের মাসে বাড়তি ধাপের রেটে বিল করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ একজন গ্রাহকের কাছ থেকে যদি গড়ে ৫০-৭০ টাকা মূল বিল বেশি নেয়া হয় তাহলে কলাপাড়া পল্লীবিদ্যুত সমিতির আওতাধীন ২৯ হাজার ৬০০ গ্রাহকের কাছ থেকে কমপক্ষে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত বিল দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের চার্জতো রয়েছেই। এসব বিল অসহায়ের মতো অধিকাংশ গ্রাহক পরিশোধ করেছেন। গ্রাহকের অভিযোগ তিন মাসের বিল পরিশোধ করতে না পেরেই ফের জুন মাসের বিল ১ জুলাই তারিখে পরিশোধের শেষ তারিখ দেখিয়ে শুক্রবার দুপুরে গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আর জুন মাসের বিলও মাত্রাতিরিক্ত বেশি। যেখানে সরকার করোনাকালীন দুর্যোগে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। সেখানে পল্লী বিদ্যুত সমিতির এমন বাড়তি, ভুতুড়ে বিল দেয়ার কারণ কি তা খতিয়ে দেখার দাবি গ্রাহকদের। আর হঠাৎ করে চার মাসের বিল ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা নিয়ে মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এটি পরিকল্পিতভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর জন্য করা হলো কি না তাও ভাবাচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। যদিও বর্তমানে বিলের অসঙ্গতি নিরসনে বিদ্যুত বিভাগ শহরে মাইকিং পর্যন্ত করে যাচ্ছে। কিন্তু করোনাকালে কত বড় দুর্যোগের মতো গ্রাহকদের মাথায় চেপে বসেছে বিদ্যুত বিল তা গ্রাহকরাই বুঝতে পারছেন। এ বোঝা এখন এই সময় কেউ বইতে পারছেন না। কলাপাড়া নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক নাসির তালুকদার জানান, আমরা এই অনিয়মের জন্য রাস্তায় মানববন্ধন করেছি। ওনাদের সঙ্গে বসেছি। কিন্তু কাক্সিক্ষত ফল পাইনি। কলাপাড়া পল্লীবিদ্যুত সমিতির ডিজিএম প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, বিল নিয়ে যার যা অসঙ্গতি রয়েছে তা সংশোধন করার কাজ চলছে। এমনকি প্রতিদিন মাইকিং করা হচ্ছে।
×