ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের ঘার

চট্টগ্রামে সরকারী ও বেসরকারী ল্যাবে বিরাট ফারাক

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৭ জুন ২০২০

চট্টগ্রামে সরকারী ও বেসরকারী ল্যাবে বিরাট ফারাক

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের হারে বিরাট ফারাক। শতকরা হারে বেসরকারী হাসপাতালে পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে সরকারী হাসপাতালের চারগুণ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া রিপোর্টে দেখা যায় সরকারী পাঁচ ল্যাবে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের হার ১৩ শতাংশ। পক্ষান্তরে, বেসরকারী দুটি পরীক্ষাগারে এই হার ৫২ শতাংশ। এটিকে ভাবনার বিষয় মানছেন বিশেষজ্ঞ এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও। এদিকে, চট্টগ্রামে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৬ জন। এ নিয়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। আরও ৫ জনের মৃত্যুসহ মৃতের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ১৬০ জনে। শুক্রবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে ২৪৬ জনের শরীরে। আক্রান্তদের মধ্যে ২১২ জন মহানগর এলাকার এবং ৩৪ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এ চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন। ফলে চট্টগ্রাম জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এখন ১৬০। এদিন সুস্থ হয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩ জন। চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষায় যুক্ত হয়েছে বেসরকারী আরেকটি ক্লিনিক। বর্তমানে সরকারী-বেসরকারী মিলে মোট ৫টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর বাইরে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবেও চট্টগ্রামের কিছু নমুনা পরীক্ষা হয়ে থাকে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি জনকণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৩১টি নমুনার মধ্যে ৮টি, ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি ল্যাবে ২৭৭ নমুনা পরীক্ষায় ১৭টি, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ৩৩৩ নমুনা পরীক্ষায় ৮৩টি, সিভাসু ল্যাবে ১০০ নমুনা পরীক্ষায় ৯, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১টি এবং বেসরকারী ইম্পেরিয়াল হসপিটালে ১৪৪ নমুনা পরীক্ষায় ৬৬ ও শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ১০০ নমুনা পরীক্ষায় ৬২টি পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরমধ্যে শেভরন ল্যাবরেটরি নতুন যুক্ত হয়েছে করোনা পরীক্ষায়। বৃহস্পতিবারই প্রথম রিপোর্ট পাওয়া যায় এ প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে। আক্রান্তের মধ্যে মহানগর এলাকায় রয়েছেন ২১২ জন। শহরের বাইরে যে ৩৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন তারমধ্যে হাটহাজারীতে ৮ জন, চন্দনাইশে ৫ জন, সাতকানিয়ায় ৪ জন, আনোয়ারায় ৩ জন, বোয়ালখালিতে ৩ জন, পটিয়ায় ২ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২ জন, সীতাকুন্ডে ২ জন এবং লোহাগাড়া, বাঁশখালী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও মীরসরাইয়ে ১ জন করে। বৃহস্পতিবার পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, সরকারী ৫টি ল্যাব চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, বিআইটিআইডি, চমেক হাসপাতাল, সিভাসু এবং কক্সবাজার মেডিক্যালে মোট পরীক্ষা হয়েছে ৮৪৯টি নমুনা। এতে করোনা শনাক্ত হয় ১১৮, যা মোট পরীক্ষার ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অপরদিকে, বেসরকারী দুই ল্যাব ইম্পেরিয়াল হসপিটাল ও শেভরনে নমুনা পরীক্ষায় হয়েছে ২৪৪টি। এরমধ্যে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ১২৮, যা মোট নমুনা পরীক্ষার ৫২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সরকারী ও বেসরকারী ল্যাবে পরীক্ষায় আক্রান্ত শনাক্তের হারে বড় ধরনের ব্যবধান। কেন এ ব্যবধান তা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাব কোন পর্যায়ে এবং আক্রান্তের কোন হারটা সঠিক সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। সরকারী হাসপাতালগুলোতে নমুনা জট রয়েছে। বর্তমানে যে রেকর্ডগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলোর কোন কোনটি সপ্তাহখানেক আগের। কিন্তু বেসরকারী হাসপাতালের রিপোর্টগুলো অনেকটাই তাৎক্ষণিক। নমুনা জমা দেয়ার পরদিনই মিলছে রিপোর্ট। আক্রান্তের হারে সরকারী ও বেসরকারী ল্যাবের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিষয়টি আমরাও ভাবছি। এর আগে প্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবেও আক্রান্তের অতি উচ্চহার এসেছিল। ইম্পেরিয়াল হসপিটাল ও শেভরন ল্যাবে আক্রান্তের হার ৫০ শতাংশের উপরে হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই দুই ল্যাব সম্পূর্ণ প্রাইভেট। সেখানে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ফি দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। সেক্ষেত্রে ধারণা করি, যাদের উপসর্গ প্রকট তারাই শুধু অর্থব্যয় করে পরীক্ষা করিয়েছেন। ফলে আক্রান্ত বেশি ধরা পড়ছে। কিন্তু সরকারী ল্যাবগুলোতে সামান্য উপসর্গ বা যাচাই করার জন্যও অনেকে পরীক্ষা করিয়ে থাকতে পারেন। সে জন্যই নেগেটিভ রিপোর্ট বেশি আসছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয় আমরা পর্যবেক্ষণ করব।
×