ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্যার পূর্বাভাস

প্রকাশিত: ২১:০৮, ২৭ জুন ২০২০

বন্যার পূর্বাভাস

বর্ষাকালে অবিরাম বৃষ্টির ধারা আবহমান বাংলার এক চিরায়ত দৃশ্য। দেশের নদ-নদীও পানিতে ভরপুর হয়ে যায়। এ যেমন এক প্রকৃতির অবারিত দান আবার বিপরীত স্রোতে নদী তীরবর্তী মানুষগুলোর জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্যোগ। ভরা বর্ষায় উপচে পড়া নদ-নদীর পানি তার নিকটবর্তী এলাকায় প্লাবনে ভাসিয়ে নেয়। ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে প্লাবনে ভাসিয়ে নেয়। ঘর-বাড়ি পানিতে তালিয়ে যায় কিংবা বিধ্বস্ত হয়। জনজীবনে আসে মহাদুর্যোগ। নদ-নদীর অববাহিকার অঞ্চলগুলো এই এক স্বাভাবিক, আবশ্যিক পর্যায়। এবারের আষাঢ় মাসের আগমনী বার্তায়ও তেমন বৃষ্টির স্রোত দেখা যায়। টানা বৃষ্টির পানিতে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বৃষ্টি থামার পরও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়। তিস্তার পানি দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। পদ্মার পানিও বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে। ফলে বিভিন্ন নদীর পানি বাড়ার লক্ষণই বলে দিচ্ছে আগাম বন্যার আশঙ্কা। নদী তীরবর্তী গণমানুষ পানির স্রোতের এমন সঙ্কটকে মোকাবেলা করেই তার জীবন ও জীবিকাকে বাঁচিয়ে রাখে। আগাম বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় পানি বাড়ার আশঙ্কাও বাড়বে। এছাড়া আবহাওয়া অফিস পুনরায় বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তা দিয়েছে, যা পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে। বৃষ্টির সঙ্গে উজানের পানি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার বন্যা কিছু আগেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এই মুহূর্তে মৌসুমি বায়ু সারাদেশে সক্রিয়। যার প্রভাবে জলীয়বাষ্পের আধিক্য এবং ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। বর্ষাকাল আসার আগেও বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রচুর। সব মিলিয়ে বন্যা আসার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণে নদ-নদীর পানিও যথেষ্ট পরিমাণ বেড়েছে, যা বন্যার আশঙ্কাকে ঘনীভূত করছে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তার অবস্থান জানান দিচ্ছে। পদ্মা, গঙ্গা, যমুনা, মেঘনা এবং তিস্তা নদীর পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে বন্যার পূর্বাভাসকে আমলে নিতে হচ্ছে। সঙ্গত কারণে সতর্কতা এবং সাবধানতাও অবলম্বন করা এই মুহূর্তে জরুরী। বন্যার আশঙ্কা দৃশ্যমান হলে নদীপাড়ের মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। ঋতু পরিবর্তনের এই মৌসুমে বর্ষার যে অবিরাম ধারা তা থেমে থেমে সব সময়ই পড়তে থাকে। বৃষ্টি আর উজান থেকে নামা পানিতে নিম্নাঞ্চল প্রথমেই প্লাবিত হয়ে যায়। এবারও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল ও চর প্লাবিত হয়েছে। আপাতত বৃষ্টিপাত কমলেও পরে তা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি বাড়লে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে সময় লাগে না। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে হবে। নদীতীরের মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রাসঙ্গিক সমস্ত কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করাও অত্যন্ত জরুরী। ভরা বর্ষার মৌসুমে প্রকৃতির এমন রুদ্ররোষে জনজীবনে যে মাত্রায় বিপর্যয় নেমে আসে তাকে প্রয়োজনীয় কর্মযোগে সামাল দেয়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা। ষড়ঋতুর বিচিত্র দেশ আমাদের বঙ্গভূমি। সূর্যের তাপপ্রবাহে যেমন জীবন অতিষ্ঠ হয় তেমনই শান্ত স্নিগ্ধ বৃষ্টির ধারায় প্রকৃতি প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। আবার সেই ধারা যদি অতিবর্ষণ হয় তাহলে পানিতে সয়লাব হয়ে যেতেও সময় লাগে না। ঘন বর্ষার প্লাবনে বাংলার মাটি যে উর্বরতা পায় সেটাও আমাদের এক অপরিমেয় সম্পদ, প্রকৃতির অবারিত দান। নরম, উর্বর পলিমাটিতে সোনালি ফসল যে মাত্রায় জনগণের জীবন ও জীবিকায় অভাবনীয় অবদান রাখে সেটার মূল্যও অনেক বেশি। নদী ও বৃষ্টিস্নাত বাংলায় কষ্ট করে ফসল ফলাতে হয় না। পলিমাটির উর্বরতা শক্তিতে শস্য শ্যামল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। তার বিপরীত স্রোতকেও সামাল দিতে হয় আমাদের। অবিরাম বন্যায় যখন দুকূল ভাসিয়ে নেয় সেই দুঃসহ ক্রান্তিকালও অতিক্রম করা এক প্রকার প্রকৃতির অমোঘ বিধান। আর এভাবেই নদী তীরবর্তী জনবসতি সংগ্রামে, লড়াইয়ে টিকে থাকে।
×