ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণোদনার বাস্তবায়ন

প্রকাশিত: ২১:০৮, ২৭ জুন ২০২০

প্রণোদনার বাস্তবায়ন

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে শিল্প ঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ২০ হাজার কোটি টাকা, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, রফতানি উন্নয়ন ফান্ড ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রিশিপমেন্ট ঋণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, গরিব মানুষের নগদ সহায়তা ৭৬১ কোটি টাকা, অতিরিক্ত ৫০ লাখ পরিবারকে দশ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা। এছাড়াও করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতে বাজেটের অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসবই মানুষ বাঁচাতে মানবিক সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা দেখতে তিন স্তরে তদারকি করার কথা। প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি মনিটরিং টিম গঠিত হয়েছে। সেই টিমের দিকে তাকিয়ে আছে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নেতৃত্বে আলাদা আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করার সিদ্ধান্তের কথা আমরা জানি। সেটি কতখানি সক্রিয় রয়েছে সেটিও দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার করে তোলা চাই। প্যাকেজে কোনভাবেই যাতে অনিয়ম না হয় এ বিষয়ে কঠোর মনিটরিং করবে এ সেলগুলো। আর এ দুটি সেলের কার্যক্রম তদারকি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল। মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে এ তদারকির কাজ কতটুকু এগিয়ে নিয়েছে সে সম্পর্কে গণমাধ্যমে সুস্পষ্ট তথ্যের অপেক্ষায় দেশবাসী। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বরং প্রণোদনা বাস্তবায়নে সমস্যার কথা। অভিযোগ উঠেছে যে, করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে গতি আনতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে ব্যাংকগুলো। গত ১৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত প্রণোদনার অর্থ ছাড়করণের নির্দেশ দিয়েছিল ব্যাংকগুলোকে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সহায়ক আরও কিছু পদক্ষেপ নিতেও বলেছিল। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ আবেদনকারীদের সহায়তা করতে প্রতিটি শাখায় আবশ্যিকভাবে একটি স্বতন্ত্র হেল্প ডেস্ক গঠন এবং সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রদর্শন করা। বাস্তবে এসবের বাস্তবায়নে কেন এবং কোথায় ঘাটতি রয়েছে সেসব খতিয়ে দেখতে হবে জনকল্যাণের স্বার্থেই। এটা পরিষ্কার যে, এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের অধিকাংশ টাকার সংস্থানই হবে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এক্ষেত্রে গতি আনার কোন বিকল্প নেই। প্রণোদনার অর্থ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে উদ্যোক্তারা। কলকারখানার মালিক, ব্যবসায়ীরা তাদের কর্মীদের চাপে রয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার অর্থ হাতে পেয়ে বেতন-ভাতা দেবে এই প্রত্যাশায় বসে আছে। কিন্তু তারা প্রণোদনার টাকা পাচ্ছে না। কবে পাবে তাও পরিষ্কার নয়। জনকল্যাণমূলক সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সার্বিক সহায়তাদান। করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে গতি আনার লক্ষ্যে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে তাকে সফল করে তোলা সব পক্ষেরই মানবিক দায়িত্ব। দেশবাসীর প্রত্যাশা মানুষ বাঁচাতে সরকারের গৃহীত প্রণোদনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তরিকতার পরিচয় দৃশ্যমান হবে। দুঃসময় কাটাতে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণই কাম্য-সে কথা বলাই বাহুল্য।
×