ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট অধিনায়কদের পারফর্মেন্স

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৭ জুন ২০২০

টেস্ট অধিনায়কদের পারফর্মেন্স

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ২০ বছর আগে ২৬ জুন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে টেস্ট খেলার মর্যাদা দেয়। মর্যাদা প্রাপ্তির পর টেস্ট খেলার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রস্তুতি, ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির জন্য ৪ মাস সময় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। অবশেষে নাঈমুর রহমান দুর্জয় দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন ১০ নবেম্বর ঢাকায় সফরকারী ভারতের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সেই অভিষেক টেস্টে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বল হাতে অধিনায়ক দুর্জয় বেশ কিছু রেকর্ডের জন্ম দিয়েছিলেন, কিন্তু হার দিয়েই শুরু হয়েছিল দলের। এরপর দুর্জয় আরও ৬ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্য বলতে একটাই ড্র এনে দিতে পেরেছেন। দুর্জয়ের পর আরও ১০ বাংলাদেশকে টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০ বছরে এই ১১ অধিনায়কের হাত ধরে টেস্ট ফরমেটে সাফল্যের পরিমাণ বেশ নগণ্যই। তবে অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে আলো ছড়িয়েছেন অনেকেই। শুধু দলগতভাবে গৌরবের চেয়ে হতাশাই বেশি সঙ্গী হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক দুর্জয় ভারতের বিরুদ্ধে দেশের ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে এবং দেশের অভিষেক ও নিজের অভিষেক টেস্টে নানা দিক থেকে এটি অনন্য কিছু রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। এমনকি প্রথম ইনিংসে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেটিও রেকর্ডের পাতায় কিছু নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দল জিততে পারেনি। সবমিলিয়ে পরবর্তী বছর নবেম্বর পর্যন্ত তিনি ৭ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দলকে একটিই মাত্র ড্র এনে দিয়েছেন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে অধিনায়ক হিসেবে নিজের শেষ সিরিজের প্রথম টেস্টে। বাকি ৬ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট-বলের নৈপুণ্যেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ১৫.৬৯ গড়ে ২০৪ রান করেছেন আর বল হাতে নিয়েছেন ৫৪.৫৪ গড়ে মাত্র ১১ উইকেট। দুর্জয়ের পর নেতৃত্ব কাঁধে ওঠে খালেদ মাসুদ পাইলটের। তিনি ২০০১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০০৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১২ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোন সাফল্যই আসেনি তার অধীনে, ১২ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ্বে দারুণ সুনাম অর্জনের পাশাপাশি দলের সেই খারাপ সময়ে ব্যাট হাতে অবশ্য খুব খারাপ কাটেনি অধিনায়ক পাইলটের। ২০.২৬ গড়ে করেছেন ৩৮৫ রান। মাঝে খালেদ মাহমুদ সুজন কিছুদিন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিও ৯ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সবতে হার দেখেছেন। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও গড়পড়তা পারফর্মেন্স ছিল তার। অধিনায়ক সুজন ৯ টেস্টে ১১.৮২ গড়ে ২০১ রান এবং ৫৭.৫৮ গড়ে ১২ উইকেট শিকার করেছেন। তাদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক করা হয় হাবিবুল বাশার সুমনকে। দলের অপরিহার্য টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা হাবিবুল অধিনায়ক হিসেবেও টেস্টে দারুণভাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। জিম্বাবুইয়ে সফরে প্রথমবার তার অধীনে গিয়েই দীর্ঘ ২১ টেস্ট পর আবার হার এড়াতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল। বুলাওয়েতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ দল। সবমিলিয়ে হাবিবুলের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের মে পর্যন্ত ১৮ টেস্টে খেলেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে দলের প্রথম টেস্ট বিজয়ও এসেছে তার অধীনে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে। এছাড়া ৪ টেস্ট ড্রয়ের বিপরীতে বাকি ১৩ টেস্ট হেরেছে দল। ব্যাট হাতেও অধিনায়ক হাবিবুল সাফল্য পেয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে তিনি টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড গড়েছেন এবং সবমিলিয়ে প্রথম বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে ১ হাজার রানও পূর্ণ করেন। অধিনায়ক হাবিবুল ১৮ টেস্টে ২৯.৮২ গড়ে ১ সেঞ্চুরিতে ১০৪৪ রান করেন। সবমিলিয়ে তাই তিনি দারুণ সফল ছিলেন অধিনায়ক হিসেবে। এরপর ২০০৭ সালের জুনে নেতৃত্ব পান এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দলকে নেতৃত্ব দেন ১৩ টেস্টে। ১ ড্র এনে দিতে পারলেও দলকে হারতে দেখেছেন তিনি ১২ টেস্টে। এই নেতৃত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি ব্যাট হাতে খুব একটা খারাপ করেননি। ২ সেঞ্চুরিতে ২২.৫৮ গড়ে করেছিলেন ৫৪২ রান করেছেন আবার অনিয়মিত স্পিনে ৮ উইকেটও শিকার করেন। এরপর মাশরাফি বিন মর্তুজার কাঁধে নেতৃত্ব চাপলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টেই ইনজুরিতে পড়েন তিনি এবং অধিনায়ক হয়ে যান সাকিব আল হাসান। সাকিবের নেতৃত্বে দুই মেয়াদে ১৪ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলগত সাফল্য আনার ক্ষেত্রে তিনি সফলতম না হলেও অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট-বলের পারফর্মেন্সে সবাইকে ছাড়িয়ে। দল তার অধীনে ১৪ টেস্টে ৩ জয় ও ১১ পরাজয় দেখেছে। আর অধিনায়ক সাকিব ব্যাট হাতে ১ শতকে ৩৫.৩০ গড়ে ৯১৮ রান ও ২৮.৭৭ গড়ে ৬১ উইকেট নিয়েছেন। মাঝে মুশফিকুর রহীম ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সফলতমও তিনিই। তার অধীনে সর্বাধিক ৩৪ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ ৭ জয় পেয়েছে, ৯টি ড্র করেছে এবং ১৮টি হেরেছে। ব্যাট হাতেও এখন পর্যন্ত অধিনায়কদের মধ্যে সেরা মুশফিক। বাংলাদেশের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক মুশফিকই শুধু ২ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। তিনি ৪ সেঞ্চুরিতে ৪১.৪৪ গড়ে ২৩২১ রান করেন। তামিম ইকবাল তার অনুপস্থিতিতে ১ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দল হেরেছে তিনি রান করেছেন মাত্র ১৩। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১ জয়, ১ ড্রয়ের সঙ্গে ৪টি হারের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে রিয়াদ সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড়ের মালিক। তিনি ৫৯.৪৪ গড়ে ২ শতকে ৫৩৫ রান করেছেন এবং বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট। গত বছরের নবেম্বরে মুমিনুল হক সৌরভ একাদশ টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। প্রথম বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে দিবারাত্রির টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। সবমিলিয়ে ৪ টেস্টে অধিনায়কত্ব করেছেন। সাকিবের অনুপস্থিতিতে প্রথম নেতৃত্ব দিয়েই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে জয় দেখেছিলেন। কিন্তু বাকি ৩ টেস্টেই পরে ইনিংস ব্যবধানের হার দেখেছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল ব্যাট হাতেও তেমন ভাল করতে পারেননি।
×