ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উজানের ঢলে বিপদসীমা অতিক্রমে তিস্তা নদীর অববাহিকায় বন্যা

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ২৬ জুন ২০২০

উজানের ঢলে বিপদসীমা অতিক্রমে তিস্তা নদীর অববাহিকায় বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ তিস্তা নদীর ভাবগতি এবার ভাল ঠেকছেনা তিস্তা অববাহিকার মানুষজনের কাছে। তিস্তার বন্যা এবার ভয়াবহ সৃস্টি করতে পারে এমনটাই ভাবছেন তারা। আজ শুত্রবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি নীলফামারী ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের এলাকাবাসী জানায় গত ২০ জুন শনিবার তিস্তা এই মৌসুমে প্রথম বিপদসীমা অতিরিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। যা পরের দিন নেমে গেলেও আজ পুনরায় একই ভাবে বিপদসীমা অতিক্রম করলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তা বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবিহিত হচ্ছি। মধ্যে রাত থেকে উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে তারা নির্ঘুম রাত কাটায়। সুত্র মতে শুধু ভারী বর্ষণ নয়, উজানে থাকা ৬৫ কিলোমিটার অদুরে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দেয়ায় তিস্তায় দ্বিতীয় দফায় বন্যা নেমেছে। তিস্তার প্রবীন ব্যাক্তিরা বলছেন মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের চেয়েও বেশী মনে করছে তিস্তায় তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি জানান তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস (ফ্লাড ফিউজ) এর কাছে ঢলের পানি এখনও ৩ ফিড নিচে থাকায় লাল সংকেত জারি করার পরিস্থিতি হয়নি। তবে হলুদ সংকেতের মাধ্যমে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন বাংলাদেশের উজানে ভারতের জলপাইগুড়ি.দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি, সিকিম রয়েছে। সেখানে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে। সেই পানি তিস্তা ও ব্রক্ষ্মপুত্র দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন অবিরাম বর্ষণ আর উজানের ঢলে শুধু তিস্তা নদী নয় কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁয়েছে। আর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তিনি বলেন আচ শুক্রবার সকাল ৯টায় ধরলার পানি বিপদসীমা ছুঁয়েছে (২৬.৫০ সেন্টিমিটার) এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার (২৩.৭০ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যে রাতে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বাড়তে থাকে। রাতে আকস্মিক নদীর পানি বাড়ায় তিস্তার চরের পরিবার নির্ঘুম রাত কাটায়। ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানি, ঝুনাগাছ চাঁপানি, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চর তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়। এ ছাড়া তিস্তা ব্যারাজ বেষ্টিত লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ পাটগ্রাম,রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার চরগ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র জানায়, আজ শুক্রবার ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৮ মিলিমিটার। গত দুইদিনে মোট বৃষ্টিপাত হয় ২২০ মিলিমিটার। গত ৮ দিনের বৃষ্টিপাত ছিল প্রায় সাড়ে ৫০০ মিলিমিটার। ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে সকাল ৬টা থেকে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। ২৪ ঘন্টায় ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বেড়েছে ২৫ সেন্টিমিটার। খালিশা চাঁপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক বিপুল চন্দ্র সেন বলেন, ক্রমাগত পানি বাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে। মানুষজন রাতে ঘুমাতে পারেনি। এমনিতে চলছে করোনা ভাইরাস। তার উপর বর্ষায় তিস্তার বন্যা আমাদের কাবু করে দিবে। তিস্তা ব্যারাজের উজানে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছশ্রমে নির্মিত বালির বাঁধটি অত্যান্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান। তিনি আরো জানান, ৫ নম্বর ওয়াডের টেপুর চরের প্রায় এক হাজার পরিবার,৪ নম্বর ওয়াডের পূর্বখড়িবাড়ি গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের বসতঘরে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া চরের জমিতে বর্তমানে থাকা বাদাম ক্ষেত গুলো তলিয়ে গেছে। ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামার চর, ফরেস্টের চর, সোনাখুলির চর ও ভেন্ডাবাড়ি চরের দেড় হাজার পরিবারের ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ সোনাখুলি এলাকায় তিস্তা নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধের অদূরে ইউনিয়ন পরিষদের তৈরি করা মাটির বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধের ওপর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দক্ষিণ সোনাখুলি কুঠিপাড়া গ্রামের আবাদি জমিগুলো তলিয়ে যায়। খালিশা চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, পূর্ববাইশ পুকুর ও ছোটখাতার পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। খগাখড়িবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, কিসামত ছাতনাই গ্রামের ৩ শতাধিক পরিবারের বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন তার এলাকা ঝাড়শিঙ্গেশ্বর গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান ,পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তিস্তা নদীর অববাহিকায় বসবাসকৃত মানুষজনের উপর নজরদারি করছি। এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নজরদারী বাড়াতে বলা হয়েছে। নীলফামারীর তিস্তা অববাহিকায় সরকারীভাবে প্রায় ১২ নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যখন যার প্রয়োজনে সেই নৌকাগুলো বন্যাকবলিত পরিবারকে সহায়তা করা হবে। তিনি সরকারী ত্রানের বিষয়ে জানান পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরন করা হবে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় যাতে পানির সংকট না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয় করে কাজ করতে বলা হয়েছে।
×