স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এ পর্যন্ত বিএনপির ৭৩ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও বিএনপির ২৮৪ নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখনও করোনা মুক্ত আছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরার নিজ বাসা থেকে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে সুস্থ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কোন চিকিৎসা নেই। সেজন্য এ ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উনি করোনা থেকে মুক্ত আছেন। তবে ওনার যে পুরনো অসুস্থতা, সেটার তেমন উন্নতি হয়নি। চিকিৎসার তেমন সুযোগও নেই। হাসপাতালগুলোতেও যাওয়া যাচ্ছে না। আর দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে তো সরকারের শর্তই আছে, বিদেশে যাওয়া যাবে না। অর্থাৎ তার যে পুরনো অসুখ সেগুলোর চিকিৎসা হচ্ছে না। ফখরুল বলেন, করোনা মহামারীর সময় সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সরকারের দায়িত্বহীন ও সমন্বয়হীন কর্মকা-ের কিছু চিত্র তুলে ধরার জন্য। বিশ্ব আজ কোভিড-১৯ নামক অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এর আঘাতে স্থবির হয়ে আছে বিশে^র মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
মির্জা ফখরুল বলেন, চরম দুর্যোগে বিপর্যস্ত দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। যদিও লাশের মিছিলে যুক্ত হওয়া একেকজন মানুষ সরকারের কাছে কেবলই একটি সংখ্যা মাত্র, কিন্তু স্বজনহারা পরিবারের কাছে তিনিই ছিলেন অমূল্য সম্পদ। এমন অবস্থায় কেউই নিরাপদ নয়। শনাক্ত হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই যা প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রতিটি পরিবারেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মারাত্মক ছোয়াচে এই রোগে যতটা আক্রান্ত হওয়ার ভয়, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত এই ভেবে যে, ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়া যাবে কি-না?
ফখরুল বলেন, করোনার কারণে সারাদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।
সরকারী হিসেবেই ইতোমধ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই গড়ে মারা যাচ্ছে ৪১ জন। অথচ দেড় মাসে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ জনের নিচে। সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে লাশের সারি। একইভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজারের মতো মানুষ। যদিও একদিনে পরীক্ষা করা হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার নমুনা। যদি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ত তবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াত আক্রান্তের সংখ্যা, সেটি সহজেই অনুমান করা যায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২৩ জুন পর্যন্ত ৪ মাস হতে চললেও ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে সারাদেশে মাত্র ৬ লাখ ৬৭ হাজার ১১টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আর এই নমুনায় শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ১৯৮ জন। শনাক্তের প্রথম দিকে মৃত্যুর হার অনেক কম থাকলেও এখন বাড়ছে লাগামহীনভাবে। শনাক্তের ৭৯তম দিনে প্রথম ৫০০ জনের মৃত্যু হলেও পরবর্তী ১৬ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো ৫০০ জনের মৃত্যু হয়। আর সর্বশেষ মাত্র ১২ দিনে মৃত্যু হয় ৫০০ জনের।
ফখরুল বলেন, পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডমিটারের তথ্য অনুযায়ী ২১৫ দেশের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে নমুনা পরীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম। বিভিন্ন দেশের গবেষণায় বলা হয়েছে, মূলত বয়স্ক ও অন্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরই মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে করোনায় তুলনামূলক কম বয়সী মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। ফখরুল বলেন, করোনাকালে ত্রাণ চুরির যে চিত্র দেশবাসী গণমাধ্যমে দেখেছে তাতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। আওয়ামী লীগারদের যেন কিছুতেই চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি’।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগপন্থী কতিপয় দলবাজ চিকিৎসকের দায়িত্বহীন বক্তব্য ও ভুলবার্তা বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণসহ অনেক বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, ১৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারী টেলিভিশন আরটিভির টকশোতে আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসক বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ আহমেদুল কবীর বলেছিলেন, তিনি শতভাগ নিশ্চিত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আসবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোটাই বিপরীত। করোনাভাইরাসের থাবা বাংলাদেশে আঘাত হানার পর পুরো স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থাপনা প্রমাণ করে, শুধু রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
যার ফলে আজ পর্যন্ত দেশের সব জেলা শহরে টেস্ট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি এবং দৈনিক টেস্টের সংখ্যা ২০ হাজার অতিক্রম করতে পারেনি। যে কারণে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে কমিউনিটতে ছড়িয়ে পড়ছে।