ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনাকালে আইনশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৬ জুন ২০২০

করোনাকালে আইনশৃঙ্খলা

সবকিছুর মন্দ দিকের পাশাপাশি ভাল দিকও কিছু রয়েছে। করোনা দানবের কারণে প্রায় সর্বস্তরের মানুষ যখন দিশাহারা ও দিকভ্রান্ত তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তিদায়ক খবর। পুলিশ বলছে, বর্তমানে অপরাধ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসায় থানায় এফআইআর বা মামলা নথিভুক্ত করার নজির খুব কম। উল্লেখ্য, রাজধানীর ৫০টি থানাসহ সারাদেশের ৬৪০টি থানায় প্রতিদিন অপরাধের চিত্র রেকর্ড করার নিয়ম রয়েছে। এ থেকে যে চিত্র পাওয়া যায়, সেটি বেশ স্বস্তিদায়ক ও কৌতূহল উদ্দীপক। যেমন, আগে প্রতিদিন অন্তত ৪ শতাধিক ছোটবড় মামলা রেকর্ড করা হতো। সেই হিসেবে বছরে নথিভুক্ত হতো এক লাখ ৪০ হাজার অপরাধের ঘটনা। এসব অপরাধের হারও গ্রামাঞ্চলের চেয়ে বেশি শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত কয়েক মাসে অপরাধের হার খুব কমে গেছে। পুলিশের দাবি অনুযায়ী তা একেবারে শূন্যের কোটায় না হলেও অনেকাংশেই যে কমেছে, তা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। তবে এ সময়ে পুরুষ ঘরবন্দী থাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন কিছু বেড়েছে। অপরাধ কমার পেছনে একাধিক কারণও রয়েছে বৈকি। যেমন, একটানা কয়েক মাস লকডাউনে প্রায় সবাই ছিল গৃহবন্দী। মানুষ যদি ঘরে থাকে, তাহলে চুরি-ডাকাতি কমবেই। রাজধানীর বাইরেও সবরকম যানবাহনসহ মানুষের চলাচল ও যাতায়াত বন্ধ থাকায় তেমন কোন অপরাধ সংঘটিত হতে পারেনি রাস্তাঘাটেও। ফলে কমেছে ছিনতাই, রাহাজানি, পকেটমার ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য। লকডাউন প্রত্যাহারের পর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষাসহ চলাচলের নির্দেশ থাকায় সর্বস্তরে বেড়েছে সতর্ক ও সচেতনতা। এর ফলেও ব্যক্তি নিরাপত্তা সুরক্ষিত ও নিশ্চিত হচ্ছে অনেকটা। গণপরিবহনে নিরাপদ দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং যাত্রী কম থাকায় অপরাধের পাশাপাশি দুর্ঘটনাও কম হচ্ছে তুলনামূলকভাবে। আরও একটি ব্যাপারÑ সাধারণ অভাবী মানুষের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন লাঘবের জন্য সরকারের ব্যাপক ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি নগদ অর্থ প্রণোদনা দেয়াও ইতিবাচক কাজ করেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ উন্নতিতে। মনে রাখতে হবে যে, মানুষ বিপদে একতাবদ্ধ, সম্প্রীতি ও সহানুভূতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে। যেমন হয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে সরকারের পাশাপাশি মানুষও দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। কমবেশি ত্রাণসহ অর্থসহায়তাও পেয়েছে। ফলে অনেকেরই চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি নামতে হয়নি ভিক্ষাবৃত্তিতেও। এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদা তৎপরতা ও টহলদারি তো আছেই। লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে স্বভাবতই রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোসহ নজরদারি ও টহল বাড়াতে হয়েছে। ফলে সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেছে বেশ ভালভাবেই। আগামীতেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। করোনার তীব্রতার কারণে এবার ঈদ-উল-ফিতর তেমন জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব হিসেবে পালিত হয়নি। এর ফলেও চুরি, ছিনতাই-রাহাজানি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। আগামীতে ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তা নিশ্চিত করে বলা যায় না এখনই। রাজধানীসহ সারাদেশে গরুর হাটগুলোতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জাল টাকার দৌরাত্ম্য, মলম পার্টির তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। সর্বস্তরের মানুষের যাতায়াতও বাড়বে তখন। ফলে সে সময় অনেক অপরাধী সুযোগ নিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এদিকে নজর রাখতে হবে। করোনা পরিস্থিতি তারা বেশ ভালভাবে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছেন। অনেকেই জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন। এই অবদানের জন্য সর্বমহলের প্রশংসা তাদের প্রাপ্য অবশ্যই। তাই বলে আগামীতেও কোনরূপ অবহেলা বা শৈথিল্য প্রদর্শন চলবে না কিছুতেই। গৌরব বা অর্জন যাই বলি না কেনÑ ম্লান হতে দেয়া যাবে না কোন পরিস্থিতিতেই।
×