ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী চক্রের থানায় হাঙ্গামা

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২৬ জুন ২০২০

করোনায় ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী চক্রের থানায় হাঙ্গামা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতারের পর থেকে একের পর এক হুমকি দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনে পুলিশের বড় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তেজগাঁও থানার ওসিকেও হুমকি দেয়া হয়েছে। পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোন পুলিশ কর্মকর্তারই চাকরি থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছে চক্রটি। এখানেই শেষ নয়, তারপরেও তাদের না ছাড়লে ছয়টি মাইক্রোবাস ভরে লোকজন তেজগাঁও থানায় গিয়ে রীতিমতো হাঙ্গামা শুরু করে। কথা কাটাকাটির পর পুলিশের সঙ্গে তারা ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ আঠারো জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের একদিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন-উর-রশীদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার দায়ে গত ২৩ জুন ঢাকার বিমানবন্দর থানা এলাকার আশকোনায় এবং গুলশান-২ এর কনফিডেন্স টাওয়ারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ভুয়া রিপোর্ট দাখিলের আরও প্রমাণাদি জব্দ হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, চক্রের মূলহোতা হুমায়ুন কবির (৪০) ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী (৩২), সাঈদ চৌধুরী (৪২), বিপ্লব দাশ (২৫), মামুনুর রশীদ (১৯) এবং আরিফুল চৌধুরী (৪০)। তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় প্রতারণার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমন ঘটনার পর থেকেই একের পর এক তুঘলকি কা- ঘটতে থাকে। বিভিন্ন মোবাইল ফোন দিয়ে ওসি থেকে শুরু করে তাকে পর্যন্ত হুমকি দেয়া হয়। তারা একটি বিশেষ জেলার ক্ষমতাধর ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে পুলিশের ওসি থেকে ডিসি পর্যন্ত সবার চাকরি খেয়ে ফেলা হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। তাতেও ছয়জনকে ছাড়া হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন রাতে ছয়টি হাইয়াস মাইক্রোবাস ভরে লোকজন তেজগাঁও থানায় যায়। তারা গ্রেফতারকৃত ছয়জনকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। কথা কাটাকাটি থেকে শুরু করে পুলিশের সঙ্গে এক প্রকার ধস্তাধস্তিও হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে তিনটি মাইক্রোবাস পালিয়ে যায়। বাকি তিনটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। ওই সময় ১৮ জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, আচমকা ছয়টি মাইক্রোবাসে করে এসে গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সঙ্গে এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। বাকি তিনটি পালিয়ে যায়। গ্রেফতার করা হয় তিনটি মাইক্রোবাসের মোট ১৮ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে বেআইনীভাবে থানায় গিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগসহ মামলার অভিযোগ আনা হয়। এমন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় পরে গ্রেফতারকৃত ১৮ জনকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। শুক্রবার তাদের আদালতে সোর্পদ করা হবে। আর আগে গ্রেফতারকৃত ছয় জনকেও রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই কর্মকর্তা বলছেন, তারা মূলত একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। ইতোমধ্যেই চক্রটি লাখ লাখ টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। তারা একটি বিশেষ জেলার ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের রেফারেন্স দিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছিল। রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে, শেখ রাসেল, রাসেল আলী, কামরুজ্জামান, আলম মোল্যা, পলাশ, রানা, রাজু, সোহাগ, সামছুদ্দোহা সোহান, উজ্জল, রেজাউল করিম, সানজিদা আক্তার, সোমাইয়া, মনি আক্তার, ইমা, মুনিসা আমীন, শাহিদা ও বিশাদ অপু।
×