ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে টাস্কফোর্স

সরকারকে বিব্রত করতে করোনার মধ্যে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল!

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৬ জুন ২০২০

সরকারকে বিব্রত করতে করোনার মধ্যে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল করে গ্রাহক হয়রানিকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে টাস্কফোর্স গঠন করেছে বিদ্যুত বিভাগ। বৃহস্পতিবার বিদ্যুত জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ওই টাস্কফোর্স গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে টাস্কফোর্সকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা এ জন্য বিদ্যুত বিভাগের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে। অভিযোগ রয়েছে ২০ থেকে ৩০০ ভাগ পর্যন্ত অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিতরণ কোম্পানির দরজায় দরজায় এখন এসব বিল ঠিক করার জন্য গ্রাহকরা ধর্র্ণা দিচ্ছেন। কিন্তু নানাভাবে বুঝিয়ে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল দিতে গ্রাহকরা বাধ্য হচ্ছেন। আবার এসব বিল না দিলে লাইন কেটে দেয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছে বিতরণ কোম্পানি। যদিও কেন এই অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল দিতে হবে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। ¯্রফে মানুষকে হয়রানি করার জন্যই এই কাজ করা হচ্ছে। বৈঠক সূত্র জানায়, বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির শীর্ষ ব্যক্তিদের নির্দেশনায় অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। তাদের নির্দেশ ছাড়া মাঠপর্যায়ে এভাবে গড়ে প্রতিটি মানুষকে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। বিদ্যুত বিভাগ বলছে সরকারকে বিব্রত করতে বিতরণ কোম্পানিগুলো ইচ্ছা করে করোনার মধ্যে এ রকম করেছে। যারাই জড়িত থাকুক তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এপ্রিল মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল আসার পর বিদ্যুত বিভাগ তখন বিতরণ কোম্পানির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। করোনা পরবর্তী সময়ে এই বিল সমন্বয় করা হবে বলে বিবৃতিও দেয় বিদ্যুত বিভাগ। অপরাধের বিচারের বদলে তাদের পক্ষ নেয়াতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে বিতরণ কোম্পানি এপ্রিলের পার মে মাসে আরও বেশি বিদ্যুত বিল ধরিয়ে দেয় বিতরণ কোম্পানি। পরপর দুই মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিলে মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। সরকার করোনার কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বিলের বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে। গ্রাহকরা জুনের মধ্যে বিদ্যুত বিল দিলে আর বিলম্ব মাশুল দিতে হবে না বলে আগে লিখিত আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু মার্চ এপ্রিল এবং মে দুই মাসেই গ্রাহককে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল ধরিয়ে দিয়েছে বিতরণ কোম্পানি। বৈঠক সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি নেসকো পাঁচ হাজার গ্রাহককে ৩০০ ভাগের বেশি বিল করেছে। এছাড়া দেশের সব বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে এভাবে কয়েক শ’ ভাগ অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল করার অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিদ্যুত বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের বিষয়টি উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘সভায় আলোচনাকালে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল প্রদানের বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী সাতদিনের ভেতর অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল প্রদানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্যুত বিভাগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোন অবস্থায় অতিরিক্ত বিল গ্রহণ করা যাবে না। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বিতরণ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল প্রদান সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে সংস্থাগুলো পৃথক পৃথক ভাবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে ব্যাখ্যা করবেন। বিদ্যুত সচিব ড. সুলতান আহমেদ, পিডিবির চেয়ারম্যান মোঃ বেলায়েত হোসেন, আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মঈন উদ্দিন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এবং দফতর ও কোম্পানিসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রতিমন্ত্রী মানব সম্পদ উন্নয়ন, সোলার বিদ্যুত প্রকল্প, পিডিবির বিদ্যুত হাব, স্মার্ট মিটারসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে পেপারলেস অফিস করার উপর গুরুত্ব দেন। বিদ্যুত বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনিয়োগ বা জিওবি খাতে ৮৭টি, প্রকল্প সহযোগিতা খাতে ১১টি ও নিজস্ব অর্থায়নে ৬টিসহ মোট ১০৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মে ২০২০ পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে অর্থিক ৭২ ভাগ ও ভৌত ৭২ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। যা জুন ২০২০ এর মধ্যে ৯০ ভাগ এর আধিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×