ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এলপিআরে যাওয়া কর্মকর্তাদের মাঝে কর্মবণ্টন করার দাবি

প্রকাশিত: ২০:০৯, ২৫ জুন ২০২০

এলপিআরে যাওয়া কর্মকর্তাদের মাঝে কর্মবণ্টন করার দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই বিশেষ জরুরী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার ভেতরে ঢুকে গেছে ইতোমধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়নি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে গত প্রায় পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশও এমন সংকটজনক পরিস্থিতির মাঝে পড়েনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সকল নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই নতুন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করাও সম্ভব হচ্ছেনা করোনা পরিস্থিতির কারণে। অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব আয় ইতোমধ্যেই কমে গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ঘাটতি বাজেট। এই বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় টাকা কোথা থেকে আসবে সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণ দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎকরোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারকে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়তে হচ্ছে। এই আর্থিক সংকটের মধ্যে সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ, দৈনন্দিন কার্যক্রম ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দক্ষ জনবল দরকার। আবার নতুন জনবল নিয়োগ দিতে গেলে সরকারকে বাড়তি খরচের চাপে পড়তে হবে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে পথ বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিপুল পরিমাণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি এলপিআর বা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাচ্ছেন। এলপিআরে থাকাকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা ভোগ করেন, তবে তাদের কোনও দায়িত্ব থাকে না। বর্তমান সংকট মোকাবেলায় এলপিআরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে কর্মবণ্টন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এলপিআরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যেহেতু সরকারকে ব্যয় করতেই হয়, তাই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে কর্মবণ্টন করা হলে একদিকে যেমন সরকারের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সচল থাকবে, অন্যদিকে এজন্য সরকারের বাড়তি কোনও অর্থব্যয় করতে হবে না। পাশাপাশি এই বিপুল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিজ্ঞতা এই সংকটময় মুহূর্তে কাজে লাগিয়ে সরকার সহজে সংকট থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে। কারণ যে কোন কঠিন সংকট মোকাবেলায় অভিজ্ঞরাই সবচেয়ে কার্যকরি সমাধান দিতে পারে। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেহেতু নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত দুই বছর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। না হলে বিপুল পরিমাণ মেধাবী চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। পাকিস্তান আমলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ২৫ বছর আর অবসরের বয়স ছিল ৫৫ বছর। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ও অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা করা ২৭ বছর ও অবসরের বয়সসীমা করা হয় ৫৭ বছর। এভাবে চলে ২০ বছর। ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তীব্র সেশনজটের কারণে ১৯৯১ সালে বয়সসীমা ৩ বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়। তবে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছরই রাখা হয়। পরে ২০১২ সালে অবসরের বয়স ২ বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়; আর মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা করা হয় ৬০ বছর। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হয়নি। অথচ বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছরের উপরে। দেখা গেছে, প্রতিবারই বিশেষ পরিস্থিতির কারণে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। তাই বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণেও চাকরিতে প্রবেশের বসয়সীমা বাড়ানো সময়োপযোগী ও যৌক্তিক দাবি। এ প্রসঙ্গে গবেষক ও পরিবেশবিদ সাধন সরকার বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে একদিকে যেমন অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বড় সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ মেধাবী শিক্ষার্থীর চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজটের কারণে গ্রাজুয়েশন শেষ করে শিক্ষার্থীরা চাকরির প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় পাবেনা। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৫ বছর বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা এখন সময়ের দাবি।
×