ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নীরব দূর্ভিক্ষ সঙ্গীতাঙ্গনে

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ২৫ জুন ২০২০

নীরব দূর্ভিক্ষ সঙ্গীতাঙ্গনে

অনলাইন রিপোর্টার ॥ নিজের ফেসবুক ফ্যান পেজে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর। সেখানে তিনি গানের কপিরাইট আইনের কিছু পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছেন। আসিফের সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। আমি ছোটবেলা থেকেই সাংগঠনিক নেচারের। একতাবদ্ধ হয়ে চলার প্রতি আমার ব্যাপক আসক্তি। বাংলাদেশে সবচেয়ে অসম্ভব কাজ হচ্ছে একতাবদ্ধ থাকা। দেশকে ভালোবাসার ক্ষেত্রেও আমরা বিভক্ত। সঙ্গীতে আসার পরপরই চেষ্টা করেছি ঐক্য গড়ে তুলতে। একশ্রেণির তারকাদের মধ্যরাতের গোপন সংলাপের জন্য হয়ে ওঠেনি। এমনকি ঐ শিল্পীদের লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে যন্ত্রশিল্পীরাও একতাবদ্ধ হতে পারেনি। এই জেদ থেকে ছোটদের নিয়ে সংগঠন করতে চাইলাম। ঐ সংগঠনের লিডারশীপ তাদের হাতেই ছিলে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, মাঝখান থেকে সময় নষ্ট হলো। আমি আমার মতো ভালো আছি। কোনও সাহায্যের জন্য কারেও কাছে হাত পাততে হবেনা ইনশাআল্লাহ। কখনোও আর সংগঠন নিয়ে মাথা ঘামাবো না। প্রান্তিক মিউজিশিয়ানদের ঘরে ঘরে এখন হাহাকার। করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে অনৈক্যের ফলাফল কী হয়, এখন জোরে কান্না করার ক্ষমতাও নাই। পেশা বদলানোর চিন্তায় ঢুকে গেছে মিউজিনিয়ানদের মাথায়। মাত্র তিনমাসের ধাক্কাই নিতে পারেনি ইন্ডাস্ট্রি, সামনে তো কঠিনতর সমস্যা আসছেই। তারপরও উপযাচক হয়ে শেষবারের মত একটা পরামর্শ দিচ্ছি। ১/ অবিলম্বে গীতিকার সুরকার কণ্ঠশিল্পীদের সমন্বয়ে কপিরাইট সোসাইটি গঠন করতে হবে। ২/ এই সোসাইটির শুরু থেকেই রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি মুক্ত রাখতে হবে। ৩/ সময় দিতে পারবে এমন গ্রহণযোগ্য সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা মেনিফেস্টো তৈরি করতে হবে। ৪/ যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বার্থ সংরক্ষন প্ল্যান করতে হবে। ৫/ কপিরাইট অফিস কর্তৃক গীতিকার সুরকার শিল্পী এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের রেভিনিউ শেয়ারিং নির্ধারন করতে হবে। ৬/ কপিরাইট আইন সংশোধন করে চলচ্চিত্রের গানের ওপর থেকে প্রযোজকের একচ্ছত্র অধিকার খর্ব করতে হবে। ৭/ সরকারি বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলে যে কোনো পন্থায় প্রচারিত গানের রয়্যালিটি নিশ্চিত করতে হবে। ৮/ সিনিয়রিটি ও দক্ষতা বিবেচনায় গ্রেডেশন সিস্টেম এবং আইডি কার্ড চালু করতে হবে। ৯/ প্রত্যেকটি পেশাদার শো থেকে কপিরাইট সোসাইটির জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পার্সেন্টেজ কাটতে হবে যেন গীতিকার সুরকাররা সেখান থেকে তাদের সৃষ্টির ন্যায্য হিস্যা পায়। ১০/ মিউজিকের প্রত্যেক অংশের হিস্যাদারকে অবশ্যই আয়কর ফাইল খুলতে হবে। ১১/ কারোও জন্য সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাকে কপিরাইট সোসাইটির নিবন্ধিত হতে হবে। উপরোক্ত কর্মযজ্ঞ চালাতে ভারতীয় কপিরাইট এ্যাক্ট এবং ভারতীয় কপিরাইট সোসাইটির পলিসি ফলো করা সর্বোত্তম উপমহাদেশীয় কনসেপ্টে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের মিউজিশিয়ানদের উদাহরণ সামনে রয়েছে। আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষন তুলে ধরলাম। অবিলম্বে এই এগারোটা পয়েন্টে কাজ করতে না পারলে অভাবের সঙ্গে সংসার ভাঙ্গা শুরু হবে পাইকারি হারে। নীরব দূর্ভিক্ষ আছে সঙ্গীতাঙ্গন, অতীতে তৈলপ্রাপ্ত স্বচ্ছলরা আপনাদের ফোন ধরবেনা, তারা করাপ্টেড পলিটিয়ানদের মত বিদেশে সেকেন্ড হোম তৈরি করে রেখেছে। সাহায্যের চিন্তা না করে অধিকার আদায়ে এখন সচেষ্ট হউন। ভিখারি নয় যোদ্ধা হউন, নিজের অধিকার ছিনিয়ে আনুন। অন্যথায় এই খাত থেকে খাওয়ার জন্য ভবিষ্যতে আর কেউ মুড়িও অফার করবে না।
×