ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসেই চীন থেকে ৮৫ হাজার মিটার আসবে

অবশেষে বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক প্রি-পেমেন্ট মিটার

প্রকাশিত: ০১:২১, ২৫ জুন ২০২০

অবশেষে বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক প্রি-পেমেন্ট মিটার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ অবশেষে যশোরে বৈদ্যুতিক স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বসানো হচ্ছে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার বাড়িতে। এরপর ১ জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে ওজোপাডিকোর লাখো গ্রাহকের বাড়িতে বসানো হবে এ মিটার। যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় এক সঙ্গে এ কার্যক্রম শুরু হলেও খুলনা বিভাগের সাত জেলায় বসানো হবে নতুন প্রি-পেমেন্ট মিটার। এছাড়া খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় এ মিটার বসানোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে যশোর বিদ্যুত সেক্টরেও। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যশোরে এক লাখ প্রি-পেমেন্ট মিটার বসানোর কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা চার মাস পিছিয়ে যায়। করোনাভাইরাস ভয়াবহতায় চীন থেকে বিশেষ এ মিটার দেশে না আসায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিদ্যুত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোরে বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের দুটি সার্কেলের আওতায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ-১ এর আওতায় ৪৩ হাজার ২শ’ ও বিভাগ-২ এর আওতায় ৪৩ হাজার ৭৪৬ জন গ্রাহক রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এসব গ্রাহকের স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যশোর বিদ্যুত বিভাগের গোটা এ প্রকল্পটি কিছুটা থমকে যায়। জানুয়ারি মাসে চীন থেকে বিদ্যুতের বিশেষ এ প্রি-পেমেন্ট মিটার যশোরে আসার কথা ছিল। কিন্তু সে মিটার প্রায় চার মাস পর জুন মাসে এসে পৌঁছায়। ভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য খানিকটা থমকে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ হাজার প্রি-পেমেন্ট মিটার যশোরে পৌঁছালে কর্তৃপক্ষ ফের তৎপরতা শুরু করে। এ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তারা প্রাথমিকভাবে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে নতুন এ মিটার বসানোর কাজ শুরু করে। এরপর ১ জুলাই থেকে কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে প্রি-পেমেন্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু করবে বলে ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল আলম জানিয়েছেন। এ মাসেই চীন থেকে আরও ৮৫ হাজার প্রি-পেমেন্ট মিটার যশোরে এসে পৌঁছাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর মাধ্যমেই যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার দেড় লক্ষাধিক গ্রাহকের বাড়িতে নতুন প্রি-পেমেন্ট মিটার পৌঁছে যাবে বলে তিনি জানান। প্রকৌশলী শহিদুল আলম বলেন, এ প্রকল্পে গ্রাহকরা বিনামূল্যে নতুন এ মিটার পাবেন। ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রাহকের পুরনো মিটার খুলে নতুন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার বসিয়ে দেবেন। গ্রাহকরা শুধু মোবাইল রিচার্জের মতোই, জি-পেই’র মাধ্যমে বিদ্যুতের বিল রিচার্জ করবেন। এটি গ্রামীণ ফোনের জি-পেই এ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজেরা প্রদান করতে পারবেন, আবার দোকান থেকেও রিচার্জ করা যেতে পারে। নতুন এ পদ্ধতির কারণে যশোর বিদ্যুত বিভাগ দুটি গ্রাহক সেবাকেন্দ্র (ভেন্ডিং স্টেশন) নির্মাণ করেছে। এরমধ্যে শহরের চিত্রামোড়ের সেবাকেন্দ্রটি গত ১ মার্চ থেকে কাজ শুরু করেছে। আর চাঁচড়া বিদ্যুত ভবনের সেবাকেন্দ্রটি ১ এপ্রিল থেকে চালু করা হয়েছে। এখান থেকেই শহরবাসী বৈদ্যুতিক প্রি-পেমেন্ট মিটার সংক্রান্ত সকল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রি-পেমেন্ট পদ্ধতিতে বিদ্যুত ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও গ্রাহক উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। মোবাইল ফোনের মতো গ্রাহক যতটুকু বিদ্যুত ব্যবহার করবেন, ঠিক ততটুকুই বিল দেবেন। তাকে বাড়তি কোন টাকা বা ঝামেলা পোহাতে হবে না। এতে গ্রাহক ও কর্তৃপক্ষ উভয়েই লাভবান হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে অনৈতিক সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যক্তি এ প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন ও নানা নেতিবাচক তথ্য প্রচার করছেন। যা থেকে সকলকে সচেতন থাকার জন্য তিনি আহ্বান জানান। সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা নিয়ে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গঠিত। এর মধ্যে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ রয়েছে। এ জোনের মধ্যে খুলনা ও বাগেরহাটে গত ২০১৫ সাল থেকে প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এ দুটি জেলার ৯৫ ভাগ গ্রাহক প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় এসেছে। এরপর সাতক্ষীরায় ৯০ ভাগ গ্রাহকের মাঝে নতুন এ মিটার বসানো হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে যশোর ও কুষ্টিয়ায় একসঙ্গে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরপর চতুর্থ পর্যায়ে এ জোনের আওতায় মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ডিজিটাল পদ্ধতির নতুন এ মিটার বসানোর কাজ শুরু হবে। সাত জেলার দুই লক্ষাধিক বিদ্যুত গ্রাহক এ প্রকল্পের আওতায় আসছে। যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ওজোপাডিকো যশোর সার্কেলের কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রি-পেমেন্ট মিটারে টাকা না থাকলে বিদ্যুত সংযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এটি মোবাইল ফোনের মতোই রিচার্জ করতে হবে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুত চালু হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বাড়তি কোন ফি বা বিদ্যুত অফিস থেকে কাউকে ডাকতে হবে না। তবে সরকারী ছুটির দিনে শুক্র ও শনিবার মিটারে ব্যালেন্স না থাকলেও সংযোগ চালু থাকবে। তবে রবিবার অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অবশ্য মিটার একাউন্ট রিচার্জ করার পরই বন্ধ দু’দিনের বকেয়া বিদ্যুত বিল কেটে নেয়া হবে। এছাড়া, গ্রাহককে মিটার ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ৪০ টাকা ও লোড ডিমান্ড বাবদ ২৫ টাকা হারে ও আনুষঙ্গিক চার্জ দিতে হবে বলে বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
×