ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সারতাজ আলীম

ফরেস্ট গাম্প ॥ সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৫ জুন ২০২০

ফরেস্ট গাম্প ॥ সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প

গল্প শুনতে মনে হয় সবারই ভাললাগে। হোক সেটা ভাল কিংবা মন্দ লাগার গল্প। এক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত জীবনের গল্পটা বোধ হয় সবারই পছন্দের। এই সিনেমাটির শুরু ‘গল্প বলা’ থেকে। বেশিরভাগ দর্শকের সিনেমাটি দেখার পর অনভূতি প্রায় একই! ‘জীবনের একটি অতি সাধারণ কিন্তু সেরা গল্পটি শুনলাম!’। গল্প বলেছেন বোকাসোকা ফরেস্ট গাম্প। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ফরেস্ট গাম্প বলতে শুরু করে তার জীবনের গল্প। আর এভাবেই শুরু হয় অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র রবার্ট জেমেকিসের নির্মিত ‘ফরেস্ট গাম্পে’র আসল গল্প! সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র ফরেস্ট গাম্প এবং সমস্যা যেন প্রতিশব্দ। পায়ের সমস্যা, কম আইকিউ এবং বোকাসোকা প্রকৃতির ফরেস্ট গাম্পকে স্কুলে ভর্তি করতে চায়নি প্রিন্সিপাল। পায়ে সমস্যা থাকায় ফরেস্ট একটু খুঁড়িয়ে হাঁটত। আশপাশের সবাই তাকে উপহাস করত। তবে ¯্রােতের বিপরীতে কেউ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। স্কুলের প্রথম দিন পরিচিত হয় জেনির সঙ্গে। পরবর্তীতে ফরেস্টকে শুধু হাঁটা নয় রীতিমতো দৌড়াতে উৎসাহ দেয় সে। তার মুখ থেকে সিনেমার সব থেকে সেরা ডায়ালগটি শোনা যায়। গাম্পের হৃদয়ে জেনির জন্য একটা জায়গা সৃষ্টি হয় । কিন্তু জেনি তাকে ভাবত নিতান্তই একটা শিশু। হাই স্কুল থেকেই জেনি গাম্পকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। পরে নতুন একজনকে সঙ্গী করে তার পথ চলা শুরু হয়। গাম্পকে এক সময় পাঠানো হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধে। বোলেট আর বারুদের গন্ধ নাকে নিয়েও সে চিঠি লিখত তার স্বপ্নের নায়িকাকে, যদিও কোন উত্তর সে পেত না। ভিয়েতনাম যুদ্ধে গিয়ে সে সহযোদ্ধা হিসেবে পায় বোবাকে, পরবর্তীতে যে নিজের ভাইয়ের মতো হয়ে ওঠে। বোবার আজন্ম স্বপ্ন ছিল চিংড়ির ব্যবসা করা। যুদ্ধে বোবা মারা যাওয়ার পর তার স্বপ্ন পূরণে যুদ্ধাহত লেফটেন্যান্ট ড্যানকে নিয়ে সে চিংড়ির জাহাজ কেনে। একপর্যায়ে কিছুক্ষণের জন্য জেনিকে পেয়েও হারিয়ে ফেলে সে। এক সময় ফরেস্টের মায়ের মৃত্যু হয়। এইডসে আক্রান্ত ছিল সে। এরই মধ্যে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়ানো, টেবিল টেনিস আয়ত্ত করা, এ্যাপলের শেয়ার কেনা এবং সেনাবাহিনীতে অন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রেসিডেন্টের থেকে পুরস্কার পাওয়া সর্বোপরি আমেরিকার এক কেলেঙ্কারি উন্মোচন করা! ধীরে ধীরে ফরেস্ট ঘটনাচক্রে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে আমেরিকার ১৯ শতকের শেষ দিকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সঙ্গে। কম আইকিউ-এর ছেলেটা পুরো দেশ বাজিমাত করে। কিন্তু এতকিছুর পরেও যেন সে সাধারণ একজন মানুষ। সাদাসিধে তার জীবন। এত অসাধারণের পরও সে শেষ পর্যন্ত সে সাধারণই থেকে যায়। ফরেস্ট গাম্প যেন একজন সাধারণ নাগরিকের চোখে দেখা আমেরিকার ১৯ শতকের শেষ দিকের ইতিহাসের সারমর্ম! পরিচালক রবার্ট জেমেকিস শুধু আমেরিকানদের জন্য নয়, বিশ্ববাসীর জন্যেই দারুণ অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। গাম্প তার জীবনের অনেকটা সময় ধরে জেনিকে পাবার চেষ্টা করে। এক সময় হয়ত পায়ও। ততদিনে অনেক দেরি হয়েছে। বার বার কাছে এসেও ফস্কে যাওয়া, জীবন দিয়ে কিছু চেয়েও না পাবার পরেও যেন কোন আফসোস থাকবে না। কারণ সাদামাটার প্রতিচ্ছবি ফরেস্ট গাম্পের বেশি কিছু পাওয়ার আকাক্সক্ষা নেই। ‘ফরেস্ট গাম্প’ এমন এক গল্প যা সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার, এগিয়ে যাওয়ার এবং স্বপ্ন দেখার অসাধারণ গল্প। এই দুর্দান্ত উপন্যাসটি লিখেছিলেন উইনস্টন গ্রুম। উপন্যাসটিকে ১৯৯৫ সালে সিনেমায় রূপ দিয়ে নিজের ঝুলিতে অস্কার তুলে নেয় রবার্ট জিমিকস। ফরেস্ট গাম্পের চরিত্রটি দারুণভাবে তুলে এনে টম হ্যাঙ্কসও জিতে নেয় অস্কার। ছবি, এডিটিং, সিস্ক্রনপ্লেসহ মোট ছয়টি ক্ষেত্রে অস্কার জেতে সিনেমাটি, ১৩টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল ফরেস্ট গাম্প। এছাড়া গোল্ডেন গ্লোবসহ মোট ৬৮টি মনোনয়নসহ ৪১টি পুরস্কার পায় ফরেস্ট গাম্প। আইএমডিবিতে সর্বকালের সেরা সিনেমার তালিকায় ১২তম স্থানে আছে সিনেমাটি। রটেন টমেটোতে দর্শকদের ভোটে স্কোর ৯৫% পেয়েছে আড়াই ঘণ্টার সিনেমাটি। সিনেমাটি দেখতে বসলে আড়াই ঘণ্টার জন্য চলে যেতে হবে অন্য ভুবনে।
×