ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জন্মদিনে অনুজ্জ্বল মেসি, কোন রকমে জয় বার্সিলোনার

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২৫ জুন ২০২০

জন্মদিনে অনুজ্জ্বল মেসি, কোন রকমে জয় বার্সিলোনার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জীবনের আরও একটি বসন্ত পার করলেন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। বুধবার ৩২ পেরিয়ে ৩৩ বছরে পা রেখেছেন আর্জেন্টিনা ও বার্সিলোনা অধিনায়ক। জন্মদিনে সতীর্থ, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ ছয়বারের ফিফা সেরা ফুটবলার। জন্মদিন রাঙানোর দারুণ সুযোগ ছিল মেসির সামনে। কেননা ক্যারিয়ারে ‘৭০০’ গোলের অনন্য মাইলফলক সামনে রেখে জন্মদিনে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু আগের ম্যাচের মতো চেনা মাঠ ন্যুক্যাম্পেও নিজের ছায়া হয়ে থাকেন খুদে জাদুকর। স্প্যানিশ লা লিগার ম্যাচে বলার মতো কিছুই করতে পারেননি বর্তমান ফিফা সেরা তারকা। এরপরও ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচের একমাত্র গোলে এ্যাথলেটিক বিলবাওকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছে স্বাগতিক বার্সা। স্বস্তির এই জয়ে আবারও পয়েন্ট তালিকার এক নম্বরে ফিরেছে কাতালানরা। ৩১ ম্যাচে তাদের ভা-ারে জমা ৬৮ পয়েন্ট। অবশ্য গত রাতের ম্যাচে জয় পেলে আবারও শীর্ষে ফিরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাঠের লড়াইয়ে নিষ্প্রভ থাকলেও প্রিয় তারকার জন্মদিন উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মেসিকে শুভকামনা জানিয়েছেন কোটি কোটি ভক্ত। সেখানে তারা লিখেছেনÑ ‘শুভ জন্মদিন মেসি’। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন মেসি। তার বাবা জর্জ হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন। মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিট্টিনি ছিলেন একজন খ-কালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তার পৈত্রিক পরিবারের আদিনিবাস ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন এ্যাঞ্জেলো মেসি ১৮৮৩ সালে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন। মেসির বড় দুই ভাই এবং এক ছোট বোন আছে। পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্ডোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। যেখানে কোচ ছিলেন তার বাবা। ১৯৯৫ সালে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েলল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও সে সময় তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বার্সিলোনা মেসির চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সিলোনায় পাড়ি জমান। এরপর থেকে কাতালানদের হয়ে মেসি শুধু ইতিহাসই গড়ে চলেছেন। বর্তমানে আর্জেন্টিনা ছাড়াও স্পেনের নাগরিক মেসি। ২০০৫ সালে নাগরিকত্ব পান তিনি। প্রস্তাব পেয়েছিলেন স্প্যানিশদের জাতীয় দলে খেলারও। তবে এই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। ফুটবল ছাড়াও বিভিন্ন ধাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন মেসি। তিনি ইউনিসেফর ‘গুডউইল’ এ্যাম্বেসেডর। এছাড়া নিজের প্রতিষ্ঠান ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা। যেটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে। যেসব লোক ‘ফ্র্যাগাইল এক্স সিনড্রোম’ রোগে আক্রান্ত তাদের নিয়েও কাজ করেন মেসি। তার জন্মভূমি রোজারিওতে শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্য ৬ লাখ ডলার ব্যয় করে একটি হাসপাতালও নির্মাণ করেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের কাছে শীর্ষস্থান খোয়ানোর পর আসন পুনর্দখলের জন্য মরিয়া ছিল বার্সা। তবে এ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের জমাট রক্ষণ কাজটা এত সহজে করতে দেয়নি কাতালানদের। ম্যাচের বেশিরভাগ সময় নিষ্প্রভ ছিলেন আর্থার ও এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যান। এর চেয়ে বড় কথা, দলের প্রাণভোমরা মেসি ছিলেন একেবারেই অনুজ্জ্বল। তবে দুই তরুণ রিকুই পুইগ ও আনসু ফাতি মাঠে নামতেই খেলায় গতি ফিরে পায় বার্সা। এই ম্যাচেও আক্রমণভাগে মেসি, লুইস সুয়ারেজ ও গ্রিজম্যানকে নিয়ে শুরুর একাদশ সাজিয়েছিলেন বার্সা কোচ কিকে সেটিয়েন। কিন্তু তারকা এই ত্রয়ী নিদারুণ হতাশ করেন। শেষ পর্যন্ত তরুণদের নৈপুণ্যে উতরে যায় বার্সা। বিরতির পর ৭১ মিনিটে রাকিটিচের গোলে স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এটা লা লিগায় রাকিটিচের ৫০তম গোল, আর চলতি মৌসুমে প্রথম। ম্যাচে বার্সার জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসতে পারত মেসি লালকার্ড দেখলে। কেননা বিলবাও’র ইয়েরেকে পায়ে লাথি দিয়ে ফেলে দেন বার্সা অধিনায়ক। তবে কপাল ভাল বাজে এই ফাউলের পরও তাকে কোন কার্ড দেখতে হয়নি।
×