ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইকবাল হাসান

মানবধর্মেই প্রকৃত কল্যাণ

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২৫ জুন ২০২০

মানবধর্মেই প্রকৃত কল্যাণ

করোনাভাইরাস যেন বহু বছরের এই সমাজব্যবস্থায় একটা গোলযোগ লাগিয়ে দিল। শুধু করোনা নয় প্লেগ, কলেরাসহ আরও বিভিন্ন মহামারীতে মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধতা ভেঙেছে। যখন কলেরার আক্রমণ ছিল এমন ধ্বংসাত্মক যে মানুষ এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে পালিয়ে বেড়াত। যারা আক্রমণের শিকার হতো তাদের সমাজের বাইরে ঠেলে দেয়া হতো। প্রতি মহামারী আমাদের দাঁড় করিয়েছে জীবনের কিছু কঠিন সত্যের মুখোমুখি। কোভিড-১৯ যখন বাংলাদেশে প্রথমে শনাক্ত হয় তখন দেখা যায় মানুষ বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা থেকে কিংবা মৃত্যুর ভয় থেকে তার মনুষ্যত্ব বোধ ভুলে গিয়ে ত্যাগ করেছিল নিজের মাকে, নিজের বাবাকে, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে। অনেক ডাক্তার পড়ালেখা করে ডাক্তারি ডিগ্রী লাভ করলেও মনুষ্যত্বের শিক্ষা লাভ করতে পারেনি। তাই তারা এ রকম দুর্যোগের সময় শুধু নিজের কথা চিন্তা করে বন্ধ করে রেখেছিল তাদের তথাকথিত চেম্বার কিংবা হাসপাতাল-ডিউটি। একজন ডাক্তারের তো মানব সেবাই তার ধ্যান-জ্ঞান হওয়া উচিত। গুটিকয়েক ডাক্তারের তুলনায় বিশাল সংখ্যক ডাক্তার তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন; তাদের কর্তব্য পালন করেছেন। বহু ডাক্তার পিপিই ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে মারাও গিয়েছেন। আমরা তাদের যেন ভুলে না যাই। আমাদের সমাজে অনেক ধর্মচর্চার মানুষ করোনা রোগীর লাশ দাফনে অংশগ্রহণ করতে দ্বিধা করেছে, এমনকি পলায়নের ঘটনাও ঘটেছে। তবে, ব্যতিক্রমও আছে। অনেক পুলিশ, অনেক স্বেচ্ছাসেবী মৃত্যুর ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে মানবধর্মের টানে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মানুষের। এসব ঘটনা তো গেল বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কথা। কিন্তু আমরা নিজেরাই যে মানবধর্মের কথা ভুলে গিয়েছি! এই দুর্যোগে সংবাদ হয়েছে করোনা সন্দেহে মাকে জঙ্গলে ফেলে দেয়ার, বাবার মুখাগ্নি না করার। এতসব দায়িত্ব অবহেলা, মনুষ্যত্বের নিখোঁজ হওয়ার খবরের মাঝে ব্যতিক্রম অনেক আছে। এই ব্যতিক্রমধর্মী মানুষগুলো হলেনÑ স্বেচ্ছাসেবী। তারা দুর্যোগে ঘরে না বসে থেকে, সমাজের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে, মানবধর্ম অর্থাৎ মানুষের প্রতি মানুষ হওয়ার কারণে যে টান অনুভূত হয় সেই টান থেকে কাজ করে গিয়েছেন। এসব স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে আছেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, বিভিন্ন পেশার মানুষ, বিভিন্ন জাতের মানুষ। কিন্তু জাত-ধর্ম এখন দেখার বিষয় না। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের বিপদে পাশে এসে দাঁড়াবে এটাই হওয়া উচিত। লালন সাঁই তার এক গানে প্রশ্ন করেছেন, ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে। যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীস্টানজাতি গোত্র নাহি রবে।’ এ রকম ধর্ম হলো মানবধর্ম। মানবধর্ম হলো মানবতার ধর্ম। অন্যের মাঝে নিজেকে খুঁজে দেখার ধর্ম। অন্যের অপূর্ণতাকে নিজের যোগ্যতা দিয়ে পূর্ণ করার ধর্ম। নিজের আনন্দকে সকলের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার ধর্ম। অন্যদের কষ্টকে ভাগ করে নেয়ার ধর্ম। এখনি সময় মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে সকল জাত-ধর্মে পার্থক্য না করে মানবতার টানে, মানবধর্মের টানে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×