ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে চালের দাম আবার বাড়ছে

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৫ জুন ২০২০

ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে চালের দাম আবার বাড়ছে

এম শাহজাহান ॥ অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ফের বেড়ে গেছে সব ধরনের চালের দাম। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর হার কমানো হয়েছে। এছাড়া বোরোর বাম্পার ফলনে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধানের মজুদ রয়েছে দেশে। এছাড়া সরকারী খাদ্যগুদামেও চালের কোন সঙ্কট নেই। এ অবস্থায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে প্রায় ৩-৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যাওয়াটি বিস্ময়কর। গরিবের খাবার হিসেবে খ্যাত চায়না ইরি ও স্বর্ণা নামের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও এই চাল ৩৭-৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া দাম বেড়ে সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৫৫-৬৮ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার চালের দাম বাড়লে সম্প্রতি মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কষ্ট বাড়ছে খেটে খাওয়া গরিব মানুষের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিল মালিকদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। করোনা সামনে রেখে গত মার্চ মাসে চালের দাম উর্ধমুখী হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে খোলা বাজারে ১০ টাকায় চাল বিক্রি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু এবং টিসিবির কার্যক্রম জোরদার করায় চালের দাম কমে আসে। কিন্তু সম্প্রতি ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫০-২৫০ টাকা। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়ছে চালের দাম। রাজধানীর কাওরানবাজার ও বাদামতলীর পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের দুষছেন। মিল মালিকরা বলছেন তাদের কাছে চাল নেই। চাহিদামতো অর্ডার করলে চাল দেয়া যাবে না। তবে পরক্ষণেই তারা একটি রেট (দাম) জানিয়ে দেয়। বলে এই দামেই নিতে হবে। কারণ ধানের দাম বেশি। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য বলছে, গত ১৬ জানুয়ারি সরকারী গুদামে মজুদ খাদ্যশস্যের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল ১১ লাখ ৮৩ হাজার মে. টন এবং গম ৩ লাখ ২৩ হাজার মে. টন। মন্ত্রণালয় বলছে-খাদ্যশস্যের এ মজুদ সন্তোষজনক। এছাড়া এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোন ঘাটতি নেই। আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম কম। বাজেটে চালের দাম কমানোর পদক্ষেপ ॥ চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর হার কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বর্তমান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কোন শুল্ক নেই। তবে যারা এসব পণ্য স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করে তাদের ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হয়। নতুন বাজেটে ওই সব পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর হার কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের সর্বোচ্চ হার ৫ শতাংশ, যা ভিত্তিমূল্য নির্বিশেষে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে রসুন ও চিনি আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আদায় করা হয়। নতুন বাজেটে এই কর কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ওই সব পণ্যের দাম আরও সহনীয় হবে। ফলে উপকৃত হবেন ভোক্তারা। এদিকে, করোনাভাইরানের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ফের লকডাউন হচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কারণেও চাল বিক্রি কিছুটা বেড়ে গেছে, এতে দামও বাড়ে। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে চলতি বোরো মৌসুমে দেশে মোট ৪৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯ লাখ হেক্টরে হাইব্রিড, ৩৮ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে উফশী ও ২৯ হাজার হেক্টরে স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ করা হয়। অন্যদিকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় হেক্টর প্রতি গড়ে ৪ দশমিক ২০ টন করে মোট দুই কোটি লাখ টন। পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যায়, আগের কমপক্ষে তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের কাছাকাছিই রয়েছে। গত বছর উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৫ টন করে মোট দুই কোটি তিন লাখ ৮৮ হাজার টন। কাপ্তানবাজারের চাল ব্যবসায়ী নুরু মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগেই বাজারে নতুন চাল এসেছে। প্রথমদিকে নতুন চালের দাম কম থাকায় আমাদের আগের চাল কেনা দামে বিক্রি করে দেই। কিন্তু কয়েক দিন ধরে আবার চালের দাম বেড়ে গেছে। বাজারে চালের যে চাহিদা সরবরাহ তার তুলনায় কম, এ কারণে হয়তো দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, সরবরাহ বাড়লে আবার চালের দাম কমবে।
×