ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধরলার ভাঙ্গন \ নির্ঘুম রাত কাটে তীরবর্তীবাসীর

প্রকাশিত: ০১:১৫, ২৪ জুন ২০২০

ধরলার ভাঙ্গন \ নির্ঘুম রাত কাটে তীরবর্তীবাসীর

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম \ ‘তিনবার বাড়ি ভাঙি নদীর কাছে পড়ে ছিলাম। এখন তাও ভাঙছে। জমি নাই, ভিটা নাই আমরা কোথায় এখন যাব জানিনা’ - ধরলার ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো ৭৫ বছরের জোসনা বালা এ কথা বলেই কাঁদতে লাগলেন। বলেন, ‘কয়দিন থেকে রাতে ঘুমাতে পারি না। কখন মাটি ভেঙ্গে যায় নদীর স্রোতে এ জন্য একদম ঘুমাতে পারি না। জেগে থাকি। জোসনা বালা জেলার রাজারহাট উপজেলার জয়কুমর কামার পাড়ার বাসিন্দা। বয়স্ক, বিধবা, ভিজিডি জাতীয় কোন ভাতা না পাওয়া এই হতদরিদ্র বৃদ্ধা সারাদিন নদীর পাড়ে বসে বসে কাঁদছেন। জোসনা বালার পাড়ার ঘরে ঘরে ভাঙ্গন আতঙ্ক। ধরলা প্রবল স্রোত আঘাত হানছে দিনে-রাতে। ঘর-বাড়ি সরানোর পাশাপাশি গাছপালা, বাঁশঝাড় কাটার হিড়িক পড়েছে। তাও সব রক্ষা করা যাচ্ছেনা। এই গ্রামের দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম জানান, সহায় সম্বল বলতে শ^শুরের কাছ থেকে পাওয়া পাঁচ শতক বাড়িভিটা ছিল। কয়েকটি ফলবতী গাছও ছিল। বাঁশঝাড় ছিল ছোট একটা। কিন্ত ধরলার তাÐবে সব শেষ। নদীর পাড় আর স্রোতের ঘূর্ণাবর্ত দেখিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এমন ভাঙনোত কী টেকা যায় ভাইজান।’ প্রতিবেশী মৃণাল চন্দ্র জানান, তার বাড়ি ভিটা ছিল ২৫ শতক। সুপারি বাগান, বাঁশঝাড়, ফলের গাছ মিলে বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু ধরলার প্রবল ভাঙ্গনে ভিটা হারিয়ে এখন কোথায় আশ্রয় নেবেন সেই চিন্তায় অস্থির। মঙ্গলবার সরেজমিন ধরলা পাড়ের কামারপাড়া গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই আধাপাকা আর পাকা বাড়ি ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। এই গ্রামের জিয়াউল হক জানান, ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষণ নেই। এ অবস্থায় বাড়ি না সরিয়ে উপায় নেই। ঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত বাদশা আলম, সেকেন্দার, নুর জামাল, আমিনুরসহ অনেকেই। তারা জানান, বর্ষা শুরুর আগে থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০টি পরিবার ভিটে হারিয়েছে। হুমকিতে রয়েছে আরও অর্ধশত পরিবার ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, জেলার ১৭টি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি পয়েন্টে তীর প্রতিরক্ষার কাজ চলছে। বাকিগুলোর কোথাও কোথাও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তবে জয়কুমরসহ কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কোন অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা।
×