ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে বাড়ছে আক্রান্ত

স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা

প্রকাশিত: ০১:১৩, ২৪ জুন ২০২০

স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী \ রাজশাহী নগরী ও জেলার আনাচে-কানাচে এখন হানা দিয়েছে করোনা। ক্রমেই করোনা পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগেও পরিস্থিতি বেশ ভাল থাকলেও এখন তা বিপদজনক হয়ে পড়েছে। রাজশাহীর ৯টি উপজেলার চেয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন মহানগরীতে বেশি। রাজশাহীতে আক্রান্তের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২৯৯ জন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগরে ১৪৩ জন। আক্রান্তের এসব তথ্য ছাড়াও রাজশাহী মহানগরীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় দিনে দিনে রাজশাহী মহানগরীতে করোনা পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বাজার, পথে ঘাটে কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্যবিধিতে বলা হয়েছে তিনফুট দূরত্বের কথা। যানবাহন চলাচলের সময় বাসে সিট প্রতি একজনের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না। অটোরিক্সায় চারজনের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না। বাসে বা অটোরিক্সায় যাত্রী উঠানোর সময় জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। দিনে যতবার যাত্রী উঠানো হবে ততবার যানবাহনে জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। কিন্তু নগরীতে চলাচল করা অটোরিক্সা চালকরা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নিজের সুরক্ষার জন্য সকালে মাস্ক পরে অটোরিক্সা নিয়ে বের হচ্ছেন, ফিরছেন সন্ধ্যায়। যাত্রী উঠানোর সময় কোন ধরনের স্প্রে করা হচ্ছে না। সকাল থেকে অটোরিক্সাগুলো নগরীর এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যাচ্ছে না। আর এসব ছোট ছোট অসচেতনতাই রাজশাহী নগরীকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সচেতনরা মনে করছেন নগরীতে চলাচল করা অটোরিক্সায় যাত্রী উঠানোর সময় জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা দরকার। তা না হলে রাজশাহী নগরী আগামীতে আরও ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাবে। এদিকে, নগরী থেকে যেসব অটোরিক্সা বা বাস জেলা উপজেলা পর্যায়ে চলাচল করছে তাদের মধ্যেও সচেতনতা নেই। ওই যানগুলোতেও ব্যবহার করা হচ্ছে না জীবাণুনাশক স্প্রে। এমনকি বাস বা অটোরিক্সার চালকদেরও নেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এতে একদিকে যানবাহনে চলাচল করা যাত্রীদের যেমন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে, তেমনি যাত্রীরাও রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। আবার নগরীর বাজারগুলো এখন জমজমাট। ব্যবসায়ীরা দোকানে কোন ধরনের স্প্রে ব্যবহার করছে না। বেশিরভাগ দোকানেই নেই হ্যান্ডস্যানিটাইজার। মাস্ক ছাড়াই মানুষ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাজারে। দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পর রাজশাহী নগরীতেও করোনা ঠেকানোর তোড়জোড় শুরু হয়। জীবাণুনাশক ছিটাতে রাস্তায় নামেন স্বয়ং মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নগরজুড়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বিতরণ করা হয় মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবিক সহায়তা ছাড়া করোনা ঠেকাতে এখন দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই রাসিকের। যদিও অবকাঠামো, জনবলসহ রাসিকের রয়েছে আলাদা স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু নমুনা সংগ্রহেই নামতে পারেনি রাসিকের স্বাস্থ্য দফতর। নগর ভবনেও নেই কোন কার্যক্রম। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেখানে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছেন। এ পরিস্থিতিতে ভরসা কেবল পুলিশ। করোনা শনাক্তের পর থেকেই পাশে রয়েছে নগর পুলিশ। বাড়ি লকডাউন ছাড়াও প্রয়োজনে বাজার করে দিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। সার্বক্ষণিক খোঁজখবরও নিচ্ছেন। চিকিৎসা ও পরামর্শ না পাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ জনমনে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মানাতেও নেই উদ্যোগ। ফলে দিনে দিনে নগরজুড়ে ভয়াবহ হচ্ছে করোনা সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে পুরো দায় সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর চাপাচ্ছে জেলার সিভিল সার্জনের দফতর। রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক আহমেদ সফি উদ্দিন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে কিছু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে। সিটি হাসপাতালও আছে। সিটি কর্পোরেশনের অর্থ আছে, পর্যাপ্ত জনবল এবং অবকাঠামো আছে। সেগুলোকে করোনা চিকিৎসার জন্য খুলে দেয়া জরুরী। তিনি যোগ করেন, গত এক দশকে রাসিকের স্বাস্থ্যখাত চরম উপেক্ষিত রয়ে গেছে। এ বছর প্রায় হাজার কোটি টাকার বাজেট হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়ন বাজেটের দরকার নেই, নজর দেয়া উচিত স্বাস্থ্যখাতেও। এদিকে রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এএফএম আঞ্জুমান আরাকে ফোন কল কিংবা ক্ষুদে বার্তা পাঠালেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে রাসিকের নমুনা সংগ্রহকারী দল। কিন্তু দিনভর চেষ্টা করেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মুঠোফোন সংযোগ পাচ্ছেন না করোনা আক্রান্তরা। বন্ধ পাওয়া গেছে তার দফতরের ফোনও। ফলে অভিযোগ বিষয়ে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এএফএম আঞ্জুমান আরার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ডাঃ এএফএম আঞ্জুমান আরার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডাঃ এনামুল হক। তিনি বলেন, নগরীতে করোনায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পুরো দায়িত্ব রাসিকের। সিভিল সার্জন দফতর কেবল সমন্বয় করবে। এই সহযোগিতাটুকুও মিলছে না। এ নিয়ে তিনিও হতাশ।
×