ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন ঘরোয়া কোচের ফুটবল ভাবনা

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ২৪ জুন ২০২০

তিন ঘরোয়া কোচের ফুটবল ভাবনা

রুমেল খান \ করোনায় স্থবিরতা মাঠের ফুটবলে। অনুশীলন বন্ধ, ঘরবন্দী যেখানে কোচরা। ভার্চুয়াল মিডিয়ায় কোচিং করিয়ে কি আর মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কোচদের মন ভরে? তারপরও পরিস্থিতি বিবেচনা করে চার দেয়ালের মাঝেই ফুটবলারদের যেমন পরামর্শ দিচ্ছেন, তেমনি ভবিষ্যতের রণকৌশল সাজিয়েই সময় কাটানোর চেষ্টা করছেন ঘরোয়া ফুটবলের তিন কোচ কামাল বাবু, গোলাম রব্বানী ছোটন ও সৈয়দ গোলাম জিলানী। ‘এখন যে পরিস্থিতি চলছে তাতে গৃহবন্দী থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু এটা করতে গিয়ে মানসিক অবস্থা যে কতটা যন্ত্রণাময় হচ্ছে সেটা বলে বুঝানো যাবে না।’ কথাগুলো দেশীয় ফুটবলের অন্যতম তারকা কোচ কামাল বাবুর। তিনি এখন সাইফ স্পোর্টিং যুব দলের কোচ। স্বপ্নবাজ ৪৫ তরুণ নিয়ে আগামীর ফুটবলার তৈরির পাঠশালার শিক্ষক। করোনায় ক্যাম্প বন্ধ, ফুটবলাররা ফিরেছে বাড়ি। কোচ কামাল বাবু যেখানে শঙ্কিত ভবিষ্যত নিয়ে। কামাল আরও বলেন, ‘একদিন বা দুইদিন নয়, প্রায় চার মাস এই দুঃসহ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। সময় কাটানোই কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে এখন। আমার দলের খেলোয়াড়দের অবস্থা আরও খারাপ। কারণ তাদের বেশিরভাগই অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে। এখন লকডাউনের কারণে তারা প্র্যাকটিস করতে পারছে না। এছাড়া পড়েছে খাদ্য সঙ্কটেও। তাদের নিয়ে আমি শঙ্কিত।’ গত ফেডারেশন কাপে সবাইকে চমকে দিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। দুর্বল দল হয়েও ওই আসরে সেবার তারা আবাহনী-মোহামেডানকে হারিয়ে রানার্সআপ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। দলটির কোচ ছিলেন সৈয়দ গোলাম জিলানী। এখনও আছেন পুরনো ঢাকার এই ক্লাবটির দায়িত্বে। এই কোচেরও এখন অখÐ অবসর। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, লকডাউনের এই দিনগুলো ঘরে বসে কাটাতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠেছি একেবারে। কারণ আমাদের কর্মই তো ফুটবল। এভাবে ফুটবল ছাড়া আর ভাল লাগছে না। তবে আমাকে সারাক্ষণ কাছে-পাশে পেয়ে আমার পরিবারের সবাই দারুণ খুশি। কেননা তারা তো আমাকে এভাবে কখনই কাছে পায় না।’ জিলানি আরও বলেন, ‘লীগের সময়ই খেলোয়াড়রা ঠিকমতো প্র্যাকটিস করতে চায় না, আর এখন তো করোনার কারণে প্র্যাকটিসই বন্ধ। কাজেই এখন তাদের ফিটনেসের অবস্থা কেমন তা তো বুঝতেই পারছেন। আবার লীগে তাদের ফিটনেস ফেরাতে আবারও শুরু করতে হবে একেবারে শূন্য থেকে।’ যে মাঠে দিনে দুইবার করে ক্যাম্পে থাকা নারী ফুটবলারদের নিয়ে অনুশীলনেই ব্যস্ত সময় কাটাতেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। সেই ছোটন নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছেন কি করে মরণঘাতী করোনাভাইরাসের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা নিয়ে। কোচিং যে এখন বন্দী হয়ে পড়েছে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে। করোনার নিষেধাজ্ঞা কাটলে মাঠে গড়াবে (আগামী অক্টোবরে) সাফের বয়সভিত্তিক দুই আসর (অনুর্ধ-১৫ ও অনুর্ধ-১৮)। এই দুই টুর্নামেন্ট নিয়েই হোমওয়ার্কটা করে রাখছেন বাংলার বাঘিনীদের এই দ্রোণাচার্য। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে তাদের সবার খোঁজ-খবর নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। এছাড়া ফুটবল নিয়ে কিছু পড়াশোনা করি, নিয়মিত নামাজ পড়ি। বলতে পারে এভাবেই সময় কাটাচ্ছি।’ ছোটন আরও যোগ করেন, ‘মেয়েদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি মনিটরিংও করছি, যেন তারা ঠিকমতো নিজেদের বাড়িতেই ফিটনেস ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যায়াম ও অনুশীলনগুলো নিয়মিত করে। পরে ক্যাম্প শুরু হলে যেন তাদের ফিটনেস নিয়ে খুব বেশি কাজ করতে না হয় এবং ফিটনেসের দিক থেকে তারা যেন সবাই ভাল একটা শেপে আসে, এ প্রত্যাশাই করছি।’ দ্রæতই এই মহামারী কেটে যাবে আবারও মুখরিত হবে নিস্তব্ধ এই মাঠগুলো, এমন প্রত্যাশায় ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।
×