ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের দৃষ্টান্ত হল পাপুল ॥ টিআইবি

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৩ জুন ২০২০

রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের দৃষ্টান্ত হল পাপুল ॥ টিআইবি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মানব পাচার, অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘দুর্বৃত্তায়নের অসম্মানজনক দৃষ্টান্ত’ হিসেবে দেখছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই ঘটনায় দেশের আইনসভার মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পাপুলের বিষয়ে কার্যকর তদন্ত ও কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও জাতীয় সংসদের কাছে দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কুয়েত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদনের প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অভিযোগের ব্যাপারে ‘যথেষ্ট গুরুত্ব না দিয়ে’ সংসদ সদস্য পাপুলকে উল্টো ‘দায়মুক্তি’ দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে টিআইবির অভিযোগ। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “মানব পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ নিয়ে কুয়েতের সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তথাকথিত তদন্তের পর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আর আমাদের দেশের সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাতেই আশ্বস্ত থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন।” কুয়েত সরকারের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের অপেক্ষায় না থেকে সরকার স্বপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিতও বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, হাজার হাজার শ্রমিককে কাজ দেওয়ার নামে পাচার করা হয়েছে এবং তাদের জিম্মী করে দফায় দফায় অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। “এই পাচারের ঘটনায় দেশের ভিতরে নিশ্চিতভাবেই একটি মানবপাচার চক্র গড়ে তোলা হয়েছিল, যাতে সরকারি-বেসরকারি এক বা একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতাও অনিবার্য।” পাপুলের সঙ্গে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ থাকার সন্দেহ করছে টিআইবি। “ঘটনার তদন্তের জন্য কুয়েতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে কেন? এই ঘটনাপ্রবাহ থেকে এটুকু স্পষ্ট যে, বরাবরই অভিযোগের কার্যকর তদন্তে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল না এবং এর পিছনে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের দৃশ্যমান যোগসাজশ ছিল।” লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতস্ত্র সংসদ সদস্য পাপুলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “অতীতে কোরো রকম রাজনৈতিক কার্মকাণ্ডে জড়িত না থেকেই ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন অভিযুক্ত সংসদ সদস্য। এরপর একরকম অভূতপূর্বভাবে তার স্ত্রীও সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। “এই সংসদ সদস্য দম্পতির রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ দেশের জনগণের স্বার্থে না কি ব্যক্তিস্বার্থে জাতীয় সংসদকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য- সে প্রশ্নটাও আমাদের করতে হবে।” সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হওয়ার পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সংসদের প্যাডে স্বামীর পক্ষে সাফাই দিয়ে বিবৃতি দেওয়াকে ‘ন্যাক্কারজনক এবং সংসদের জন্য ‘অবমাননাকর’ বলে মন্তব্য করেছেন ইফতেখারুজ্জামান। আলোচিত সংসদ সদস্য দম্পতির কর্মকাণ্ডে দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণণ্ডলে দেশের সম্মান ‘প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে’ মন্তব্য করে এই বিষয়ে সরকার থেকে কার্যকর তৎপরতা দেখতে চায় টিআইবি। জনশক্তি রপ্তানিকারক পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লক্ষ্মীপুরের আসনটিতে।
×