নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ ॥ করোনার প্রাদুর্ভাবে জীবন যেখানে শঙ্কিত এমন দুঃসময়েও কিশোরগঞ্জে সক্রিয় ভূমিদস্যুচক্র। এবার এসব সিন্ডিকেটের শিকার হয়েছেন মোঃ শাহ কুতুব হোসাইনী নামে কিশোরগঞ্জ জজকোর্টের শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী। আদালত বন্ধ থাকায় প্রশাসনের বারবার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শহরতলী মারিয়া মোল্লাপাড়ায় প্রভাবশালী কিছু চাঁদাবাজ-ভূমিদস্যুচক্র প্রকাশ্যে নানামুখী সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ ও সদর থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শিক্ষানবিশ আইনজীবীর ওপর সশস্ত্র হামলা করে তার ভোগ দখলকৃত জমি থেকে দখলচ্যুতের চেষ্টার তাণ্ডবলীলা চালিয়ে প্রাণনাশের অব্যাহত হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। চক্রটি ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশ আইনজীবীর জমি জবর দখল করতে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে আদালতে পাঠালেও আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে যায়। এতে চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের গৌরাঙ্গবাজারে স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টাল কার্যালয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশ আইনজীবী মোঃ শাহ কুতুব হোসাইনী সাংবাদিক সম্মেলন করে ভূমিদস্যুচক্রের কবল হতে রক্ষা পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন। এ সময় তিনি ও তার পরিবারের লোকদের রক্ষার জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার কামনা করেছেন।
এজাহার ও লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পৌর শহরের ফিসারী রোডের মৃত হামিদ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে শিক্ষানবিশ আইনজীবী মোঃ শাহ কুতুব হোসাইনী সদর উপজেলার বিন্নগাঁও মৌজার সি.এস এবং আর.এস ২৭০৭ ও ২৭২২ দাগে ৫.৫০ শতাংশ ভূমি ২০১৬ সালে মারিয়া মোল্লাপাড়ার আব্দুল হামিদ ওরফে ছুরত আলীর মেয়ে তাছলিমার কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে ভোগ দখল করে আসছিলেন। গত ৩রা মে ২৭০৭ নং দাগের ২ শতাংশ ভূমিতে মাটি ভরাটসহ নির্মাণ কাজ করতে গেলে এলাকার প্রভাবশালী কতিপয় চাঁদাবাজ-ভূমিদস্যু সশস্ত্র হামলাসহ ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় খরিদকৃত জমি থেকে তাকে উচ্ছেদসহ খুন জখমের হুমকি প্রদান করে।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী মোঃ শাহ কুতুব হোসাইনী জানান, সি.এস মূলে দুই সহোদর ইন্তাজ শেখ ও ইদ্রিস শেখ ৩৩ শতাংশ ভূমির মালিক। দুই ভাইয়ের প্রত্যেকের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের মধ্যে ইন্তাজের মেয়ে উম্বিতন নেছার অংশ ১৯৮৩ সালে মোল্লাপাড়ার আব্দুল হামিদ ওরফে ছুরত আলীর কাছে ২৭০৭ ও ২৭২২ দাগে ৫.৫০ শতাংশ ভূমি সাফ কাওলায় বিক্রি করেন। পরে তিনি সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় ৩৩ শতাংশের অন্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে আদালতে বাটোয়ারা মোকদ্দমা করেন। ১৯৯৯ সালে আদালত তার পক্ষে রায় ও ডিক্রি প্রদান করে জমি বুঝিয়ে দেয়। এরপর ছুরত আলী ২০১২ সালে তার মেয়ে তাছলিমাকে দুই দাগের ৫.৫০ শতাংশ ভূমি হেবামূলে কাওলা দেন। পরে তাছলিমা ২০১৬ সালের ৩০শে মার্চ এই সম্পক্তি শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. শাহ কুতুব হোসাইনীর কাছে বিক্রি করেন। জমিটি ক্রয়ের পর শাহ কুতুব হোসাইনী জায়গা দখলে নিয়ে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় বাটোয়ারা মোকদ্দমা দায়ের করেন। বাটোয়ারা মোকদ্দমায় শাহ কুতুব হোসাইনী বিবাদীগণের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। বিবাদীগণ উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করলেও তাদের দরখাস্ত নামঞ্জুর হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহ নূর হোসাইনী জানান, একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অপরপক্ষে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় উচ্চ আদালতের রায় ও ডিক্রি থাকা সত্ত্বেও ভূমিদস্যুচক্রটি প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে যাচ্ছে। শাহ কুতুব হোসাইনী তার জমিতে একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ শুরু করলে চক্রটি কাজে বাঁধা দেয় এবং ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়। বর্তমানে বেপরোয়া ভূমিদস্যুচক্রের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে তিনি এখন ভীতসন্ত্রস্ত। জীবনশঙ্কায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।