ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আপনার শিশু ॥ শিশু বিকাশ ও থাইরয়েড

প্রকাশিত: ০১:০৮, ২৩ জুন ২০২০

আপনার শিশু ॥ শিশু বিকাশ ও থাইরয়েড

জন্মের পর সাধারণত প্রথম তিন বছরে একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পন্ন হয়, আর যার বেশিরভাগই ঘটে জীবনের প্রথম বছরে। শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি আর মানসিক বিকাশে থাইরয়েড হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এ সময় কোন কারণে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে শিশুটি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে বেড়ে ওঠে। আর একেই কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। সাধারণত দেখা যায় একটি শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি পুরোপুরি গঠিত না হলে বা হরমোন তৈরিতে সমস্যা হলে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম হয়ে থাকে। রোগের লক্ষণ প্রায়ই ধীরে প্রকাশিত হয় যার দরুন প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা কঠিন। তবে রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে দেখা যায় শিশুরা খুব শান্ত প্রকৃতির হয় যা অস্বাভাবিক। অতিরিক্ত ঘুমায়, খুবই ক্ষীণ আওয়াজ হয় কান্নায়। মা বাবারা ভাবেন তাদের শিশুটি ভীষণ শান্ত। এছাড়া দেখা যায় অনেক সময় জন্মের পর পর প্রথম যে কালো পায়খানা ২৪ ঘণ্টার মাঝে হওয়ার কথা তা সাধারণত ৭২ ঘণ্টা পরে হয়। বাচ্চার জিহবা বড় থাকে এবং মুখ গহ্বরের বাহিরে বের হয়ে থাকে। শরীরের ত্বক খসখসে থাকে, মাংসপেশী নরম প্রকৃতির হয়। নাভিতে হার্নিয়া থাকতে পারে, পায়খানা কষা থাকে, জন্মের পর দুই সপ্তাহের বেশি জন্ডিস থাকতে পারে। শারীরিক এই লক্ষণের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ বিলম্বিত হয় যেমন- সময় মত ঘাড় শক্ত হওয়া, বসতে পারা, দাঁড়াতে পারা ইত্যাদি ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। অথচ সামান্য একটু সচেতনতা, জন্মের পর ৫-৬ দিনের দিন একটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে খুব দ্রুত এই রোগ নির্ণয় করে শুরু থেকেই ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে খুব সহজেই শারীরিক ও মানসিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধীত্বের হাত থেকে আগামী দিনের ভবিষ্যত এ দেশের কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে শিশু জন্মের পরপরই থাইরয়েডের এই পরীক্ষাটি বাধ্যতামূলক রুটিন পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশেও কিছু কিছু হাসপাতালে শিশু জন্মের পরপরই থাইরয়েডের পরীক্ষাটি করানো হয়। তবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সাস্থ্যসম্মত শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিশু জন্মের পরপরই থাইরয়েডের এই পরীক্ষাটি বাধ্যতামূলক করা অতীব জরুরী। পরবর্তীতে রোগ নির্ণয় হলে দ্রুত ওজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ, নিয়মিত ফলোআপ আর প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। প্রয়োজন শুধু একটুখানি সদিচ্ছা আর সচেতনতার। ডাঃ শামীমা শারমীন শোভা এম বি বি এস (চমেক) ডি সি এইচ (শিশু) এফ সি পি এস (শিশু) শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ।
×