ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা মোকাবেলায় তামাক পণ্যের কর বাড়ানোর পরামর্শ

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২৩ জুন ২০২০

করোনা মোকাবেলায় তামাক পণ্যের কর বাড়ানোর পরামর্শ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা মোকাবেলায় সরকারকে তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। সোমবার দুপুরে তামাক কর বিষয়ক ‘অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া ২০২০-২১’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদরা। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ২০টি তামাকবিরোধী সংগঠন। বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তামাকবিরোধীদের দাবি অনুযায়ী বাজেটে তামাক কর ও দাম বাড়ানো সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাসের পাশাপাশি তামাক খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব। এ অর্থ করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত থোক বরাদ্দ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটে এসব প্রস্তাব উপেক্ষিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশও করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তামাক কর বিষয়ক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা বারবার বলছি তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমাদের উন্নয়ন দর্শন এখন বাজার অর্থনীতি নির্ভর হয়ে গেছে। সুতরাং জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। তবে আমরা তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর কথা বলেই যাব। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বাজেট অর্থায়নে ব্যাংকিং খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভাল নয়। সরকারের হাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বাড়তি রাজস্ব আহরণের একটি সুযোগ রয়েছে। আমরা দেখলাম, তামাকপণ্য থেকে অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব, যা বাজেট অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়ানোর সবচেয়ে বড় সুফল হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে তামাক ব্যবহার শুরু করা থেকে নিরুৎসাহিত করা। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দরিদ্র মানুষের তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্যক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য অনেক কম। তাই দাম বাড়িয়ে তাদেরও তামাকপণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হলে এটা তাদের জন্য উপকারই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা না কমানো এবং গুলের দাম প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি না করায় মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহার কমবে না। আমি আশা করব, চূড়ান্ত বাজেটে আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপসহ দাম ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হবে। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বাজেটে তামাকপণ্যের দাম এবং কর বৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়তি রাজস্ব আয়ের সুযোগ ছিল। কারণ এ মুহূর্তে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ সারচার্জ এবং সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ এখনও রয়েছে। যে ২০টি তামাকবিরোধী সংগঠন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে এদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বিসিসিপি, এসিডি, ইপসা, এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, বিএনটিটিপি, বিটা, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, প্রত্যাশা, টিসিআরসি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ভয়েস, উফাত, তাবিনাজ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, এ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা এবং প্রজ্ঞা।
×