শঙ্কর কুমার দে ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা লাখের ঘর ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন করে কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। জীবন-জীবিকার এক সঙ্গে চালানোর জন্য নতুন করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এই কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল তৈরি ও বাস্তবায়নে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সেল। এই বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি ও পরামর্শ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জীবন চলতে থাকবে, জীবন স্থবির থাকতে পারে না। তারপরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলতে হবে। করোনার কারণে আমাদের উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যতটুক সম্ভব উন্নয়নের গতিটা ধরে রেখে শত সমস্যার মাঝেও ব্যবস্থা করেছি। প্রায় তিন মাস আগে শুরুতে করোনাভাইরাস শনাক্ত এক অঙ্কের ঘর থেকে এখন লাখের ঘর ছাড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারকেও ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকে জানা গেছে, নতুন প্রেক্ষাপটে করোনা মোকাবেলায় কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাকসিনের প্রতি নজর রাখা যাতে দ্রুততম সময়ে তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনীতিকে সচল রাখা, স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি। সারাবিশ্বে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ কারা কারা করছে সে সম্পর্কে জানার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সেল কাজ করছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ যেন যুক্ত হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন। অর্থাৎ করোনা মোকাবেলায় স্থায়ী সমাধান যে ভ্যাকসিন এবং এই ভ্যাকসিন যেন বিশ্বে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ পায় সেটাকে প্রথম কৌশল হিসেবে নেয়া হয়েছে।
সরকারের কৌশলগুলোর মধ্যে আরেকটি হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনীতিকে সচল রাখা। যখন অন্যান্য দেশগুলো ভয় পাচ্ছে, জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করছে, তখনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে অর্থনীতিকে চালু রাখার নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যার ফলে করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে করোনা সঙ্কটে কার্ফু বা লকডাউন নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই কৌশলটি এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও অনুসরণ করছে। সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে নয়, বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার সঙ্গে লড়াই করাটাই হলো সরকারের কৌশল।
স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে করোনা মোকাবেলার আরেকটি কৌশল নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দেয়া। ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তিনি প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ায় বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন। এখন প্রান্তিক পর্যায়ে আইসিইউ সেবা সহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন যেন দ্রুত হয় সেটার তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়।
করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি আরেক কৌশল। করোনা সঙ্কটে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে লোকবলের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব রয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যেই ২ হাজারের বেশি চিকিৎসক এবং প্রায় ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এবং নার্স নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, আরও চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব কৌশলের কারণেই বাংলাদেশ করোনা সঙ্কটকালেও পর্যুদস্ত হয়নি, বরং সামনের দিনগুলোতে করোনার সঙ্গে সহাবস্থানের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে।