ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত বিভ্রাটে ক্ষতিগ্রস্ত মিটারের মূল্য দাবি পিডিবির

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২২ জুন ২০২০

বিদ্যুত বিভ্রাটে ক্ষতিগ্রস্ত মিটারের মূল্য দাবি পিডিবির

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ১১ কেভি লাইনে বৈদ্যুতিক বিভ্রাটের কারণে প্রতিনিয়ত প্রি-পেইড মিটার পুড়ে যাওয়াসহ লক হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত দুই মাসে এক শ’র বেশি মিটার পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় খুলশী বিতরণ বিভাগ অবৈধভাবে মিটারের মূল্য দাবি করছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করায় উল্টো মিটারের দাম আদায় করে প্রতিস্থাপন করার মতো ঘটনাও ঘটছে। এছাড়াও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে গ্রাহককে বিনামূল্যে মিটার প্রতিস্থাপনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ অর্থ না দেয়ায় পিডিবি বেশকিছু গ্রাহককে বৈদ্যুতিক গোলযোগে পুড়ে যাওয়া মিটার প্রতিস্থাপন না করে ভোগান্তিতে ফেলেছে। গ্রাহকের অভিযোগ রেজিস্ট্রারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। আরও অভিযোগ, এসব প্রি-পেইড মিটারে গ্রাহকরা ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ টাকা সংরক্ষণ করেছিল তাও ফিরে পাচ্ছে না। পিডিবি তৃতীয় ধাপের ও নিম্নমানের প্রি-পেইড মিটার দিয়ে আবারও বেকায়দায় ফেলছে গ্রাহকদের। পিডিবির এক সহকারী প্রকৌশলী বিষয়টি স্বীকার করলেও উর্ধতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ। অভিযোগ রয়েছে, গত ৫ মে রাতে আকবর শাহ মাজার এলাকায় ১১ কেভি লাইন বিকট শব্দে বিদ্যুত লাইন ছিড়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এ বিদ্যুত বিভ্রাটের পর আশপাশের আবাসিক ভবনগুলোতে টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফ্যানসহ মূল্যবান বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিকল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আকবর শাহ মাজারের নিচে থাকা ডিজিটাল থাই এ্যালুমিনিয়াম নামক একটি দোকানের বাণিজ্যিক মিটার (১০১১০০০৮২০০) পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মিটারটিতে ৫শ’ টাকা ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এ বিষয়ে ষোলশহরস্থ খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের চতুর্থ তলায় থাকা অভিযোগ খাতায় বিষয়টি নথিভুক্ত করেছেন জনৈক পার্থ নামের এক কর্মচারী। জনৈক রতন নামের এক কর্মচারী মিটারটি পরিদর্শন করে ছবিও তুলে নিয়েছেন। এরপর দীর্ঘ প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও আদৌ মিটারটি প্রতিস্থাপন করা হয়নি। জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর গত ১৮ জুন ওই মিটারটি খুলে নিয়ে গেছে রতনসহ আরও একজন। বিদ্যুত বিভ্রাটে মিটারটি পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরও মিটারের দাম ৫ হাজার ২শ’ টাকা দাবি করছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, আকবর শাহ হাউজিং সোসাইটি, লেকভিউ আবাসিক এলাকা ও পান্থনগর সড়কে পুড়ে যাওয়া অনেক মিটার অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জনৈক শঙ্করের মাধ্যমে এসব মিটার লাগানো হয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। অপরদিকে, চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের ঝর্ণার পাহাড় বা কাটা পাহাড়ের সামনে থাকা ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইনের দূরত্ব প্রায় দেড় ফুট। এছাড়াও ৩৩ কেভি লাইনগুলো একটু বাতাস হলেই ১১ কেভি লাইনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জেনারেটরের ফিউজ জ্বলে যায়। ফলে ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে প্রি-পেইড মিটারগুলো লক হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। এছাড়াও প্রতিদিন বেশ কয়েকবার বিদ্যুতের ভোল্টেজ উঠানামা করলেও অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুতের মিটার কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে বিকল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকে ৬শ’ টাকা জমা দিয়ে আবার লকটি খুলতে বাধ্য হচ্ছে গ্রাহক। খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পক্ষ থেকে জানা গেছে, আকস্মিকভাবে লাইনের ফিউজ পুড়ে যাওয়াসহ হাই ভোল্টেজের ১১ কেভি লাইন ছিড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও আকবর শাহ মাজার সংলগ্ন শহীদ স্মরণী আবাসিক এলাকার ১নং সড়কে সলিমউল্লাহ নামের এক গ্রাহককে আলিমা ভিলায় (মিটার নং-১০১৩০০০৯৯৯৯) ১০ কিলোওয়াট ব্যবহার ক্ষমতায় থ্রি-ফেইজ লাইন দিয়েছে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর। এ মিটারের আওতায় ৫০টিরও বেশি পরিবার বিদ্যুত ব্যবহার করছে। সরকারী ভূমিতে এই ভূমিদস্যুকে থ্রি-ফেইজ সংযোগ দেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে পিডিবি। এমনকি মূল পিলার থেকে ১০ মিটার বা ৩১ ফুট দূরে সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও ২শ’ ফুট দূরে এ সংযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ, এত দূরে পিলার ব্যতীত সংযোগ দেয়ার বিধান নেই। অপরদিকে, ওই আবাসিক এলাকার ২নং সড়কে পিলার বাদ দিয়ে মূল লাইন থেকে অবৈধভাবে একটি কানেকশন টানা হয়েছে আরেকটি সড়কে। এ বিষয়েও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। ফলে আবাসিক এলাকার গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন অভিযোগ পিডিবির ‘কমপ্লেইন’ নাম্বারে কোন গ্রাহক সেবা চাইলে তা মেরামত করা হয়।
×