ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামে প্রত্যাবর্তন

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২২ জুন ২০২০

গ্রামে প্রত্যাবর্তন

রাজধানী শহর ঢাকা গোটা দেশের মানুষের কাছেই বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বহুজনের কাছেই স্বপ্নের শহর। ঢাকা নানা কারণেই দেশের মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। আধুনিকতার সর্বশেষ সংযুক্তিগুলো রাজধানীতেই ঘটে থাকে। অন্য শহরের তুলনায় রাজধানীতে নাগরিক সুবিধা থাকে তুলনামূলকভাবে বেশি। উন্নত শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা, উন্নত আবাসনসহ সার্বিকভাবে জীবনমানের উন্নয়নের জন্য দেশের বিরাট একটি অংশ বেছে নেয় রাজধানী শহরকেই। মফস্বলে পড়ুয়া তরুণের স্বপ্ন থাকে উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজধানীতেই আসার। তবে সব শিক্ষার্থীর পক্ষেই ঢাকার শিক্ষালয়ে আসন পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যারা ঢাকায় পড়তে আসে তাদের বড় অংশ এই শহরেই খুঁজে নেয় কর্মসংস্থান। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারের বাইরেও থাকে বিশাল কর্মক্ষেত্র, যা অপ্রাতিষ্ঠানিক। এর বাইরে রয়েছে স্বকর্মসংস্থান। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক কারণে ঢাকা এক পর্যায়ে হয়ে উঠেছে স্বপ্ন পূরণের শহর। নদীভাঙ্গা মানুষ থেকে শুরু করে পল্লী অঞ্চলের ভূমিহারা কৃষক এবং উপার্জনের উপায় করতে ব্যর্থ হওয়া শ্রমজীবী মানুষের বিরাট একটি অংশ ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে মূলত কাজের সন্ধানে। ঢাকায় এসে আর কিছু না হোক রিক্সা চালিয়েও জীবনধারণ করা সম্ভব এমন পরিকল্পনা থেকে নিঃস্ব দুস্থ মানুষ ঢাকায় বসতি গড়ে। তাছাড়া রকমারি বিচিত্র সব পেশার সুযোগ থাকে যে কোন বড় শহরেই। মহানগরী ঢাকা সেইদিক দিয়ে ভাগ্যসন্ধানী মানুষের জন্য সুযোগ খুঁজে নেয়ার দারুণ সুপরিসর প্রাঙ্গণ। অলিতে গলিতে কিংবা সড়কে-মহাসড়কের ধারে রকমারি পণ্যের বিকিকিনির সুযোগ ঢাকা ছাড়া আর কোন্ শহরে রয়েছে? তবে সব হিসাবই বদলে গেছে বৈশ্বিক মহামারী শুরু হওয়ার পর। করোনাভাইরাস এক অদৃশ্য দানব হয়ে উঠেছে, যা এখন মানুষের জীবিকা গলাধঃকরণ করতে শুরু করেছে। কাজ হারিয়ে মানুষ দিশেহারা। মাসের পর মাস উপার্জনহীন থাকা অসম্ভব দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের পক্ষে। অবস্থাসম্পন্নদের কাছে চেয়েচিন্তে, সোজা কথায় ভিক্ষে করে পেট বাঁচানোর মানসিকতা নেই ওইসব শ্রমজীবী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারের কর্মীর। ফলে একদা স্বপ্নের শহর তাদের কাছে বাস্তবে বিভীষিকা হয়ে উঠেছে, পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নের নগরীতে। এখন উপায় কী? অনেকেই ভাবছেন গ্রামে দেশের বাড়িতেই ফিরে যাবেন। অন্তত সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই তো আছে। মাস শেষ হলে বাড়িঅলাকে কাড়ি কাড়ি টাকা তো দেয়া লাগবে না। আর সেটা ভেবেই তারা পাড়ি জমাতে শুরু করে দিয়েছেন গ্রামে। করোনার কারণে কর্মহীন মানুষ বাধ্য হচ্ছে গ্রামে প্রত্যাবর্তন করতে। স্বল্প আয়ের মানুষ হয়তো কোনরকমে টিকে থাকতে পারত, কিন্তু অন্যায্য মুনাফাপ্রবণ শ্রেণীর কারণে বিকল্প কিছু ভাবতেও পারছে না তারা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ, এই সময়ে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। মধ্যবিত্ত সমাজ এই অতিমুনাফার মানসিকতায় পিষ্ট বহুকাল। করোনা তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। আগামীতে যদি ঢাকা থেকে গ্রামে প্রত্যাবর্তনের স্রোতে মধ্যবিত্তের বড় অংশ যুক্ত হয়ে যায় তাহলে ঢাকার প্রায় সব এলাকার বহুতল ভবনের অনেক ফ্ল্যাটই শূন্য পড়ে থাকবে। এখনই অনেক বাড়িঅলা নতুন করে ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না। আগামীতে এই সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে। মানুষ স্বপ্ন দেখে বড় শহরে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের। মহামারীর মতো নিষ্ঠুর পরিস্থিতিতে মানুষের স্বপ্নভঙ্গ ঘটে। তবু জেগে থাকে আশাবাদ। একদিন করোনা বিদায় নেবে, একদিন আবার পরিস্থিতির উন্নতি হবে। মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখবে। তখন আবার দুহাত বাড়িয়ে দেবে ইট কাঠ কংক্রিটের এই মহানগরী ঢাকা।
×