ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৯২ থেকে শতভাগ সুস্থতা দাবি ভাইরাস নেগেটিভ হয়েছে ৮ থেকে ১০ দিনে

দেশে ফ্যাভিপিরাভির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফলতা মিলেছে

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২২ জুন ২০২০

দেশে ফ্যাভিপিরাভির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফলতা মিলেছে

রশিদ মামুন ॥ ইনফ্লুয়েঞ্জায় ব্যবহৃত জাপানী ফ্যাভিপিরাভির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফলতা মিলেছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীতে দুটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেই ওষুধটি সফল হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। জাপানের ফ্যাভিপিরাভিরকে কিছুটা সংস্কার করে এ্যাভিফ্যাভির নাম দিয়ে গত ১১ জুন থেকে প্রয়োগ করছে রাশিয়া। রাশিয়ার ১৫ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে সুস্থতার হার আশাব্যঞ্জক বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানের ফুজিফিল্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তয়োম ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি ফ্যাভিপিরাভির এ্যাভিগান করোনা সারাতে কার্যকর বলে চীনা চিকিৎসকদের দাবির পর সারাবিশ্বে এই ওষুধ নিয়ে আগ্রহ বাড়ে। ওষুধটি নিয়ে নানা বিতর্কের মধ্যেও জাপান ব্যাপকভাবে এটি তৈরি করে সারাবিশ্বে বিনামূল্যে সরবরাহ করতে চাইছে। একই ওষুধে রাশিয়া তৈরি করে এ্যাভিফ্যাভির নাম দিয়ে ব্যাপকভাবে দেশের করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগ শুরু করেছে। রাশিয়া গত ১১ জুন থেকে তাদের দেশের হাসপাতালগুলোয় এ্যাভিফ্যাভির প্রয়োগ করছে। এতে দেশটিতে সংক্রমণের হার একই রকম থাকলেও সুস্থতার হার বেড়েছে। ফলে করোনার এ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা কমার হার আশা জাগিয়েছে। রাশিয়ার এই পরিস্থিতিতে দেশেও ফ্যাভিপিরাভির উৎপাদনকারীদের কাছে খোঁজ নিতে গিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আশার খবর জানা গেছে। ফ্যাভিপিরাভির উৎপাদনকারী কোম্পানি বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক গ্লোবাল বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মঞ্জুরুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত দুটি ট্রায়াল হয়েছে। দুটিতেই তারা ওষুধ সরবরাহ করে সহায়তা করেছেন। একটি বিমান বাহিনী করেছে। অন্যটি করেছে সেনাবাহিনী। দুটি ট্রায়ালের ফল দারুণ আশা জাগিয়েছে। মেডিসিন সোসাইটি আরও ৪৮ জনের ওপর একটি বড় ট্রায়াল করছে সেটির ফল হাতে আসতে আরও সপ্তাহখানেক সময় প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, রাশিয়াতেও একই ওষুধ প্রয়োগ হচ্ছে। যেহেতু উন্নত বিশ্বের প্যাটেন্ট জটিলতা রয়েছে সেহেতু ফ্যাভিপিরাভিরকে কিছুটা সংস্কার করে এ্যাভিফ্যাভির নাম দিয়েছে। এখানে দুটি ওষুধ একই; এর কার্যকারিতাও আলাদা কিছু নয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চিকিৎসক এয়ার কমোডর আবদুন নূর ২৯ জনের ওপর চালানো একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কথা উল্লেখ করে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দারুণ আশা জাগানো ফল পেয়েছি। তিনি জানান, বিমান বাহিনীর ১২৫ জনের একটি দলের শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের আমরা পরীক্ষা করে ৩৭ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ পাই। এদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়াতে তাদের আমরা সিএমএইচে প্রেরণ করি। বাকি ২৯ জনের ওপর ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগ করি। সবাইকে ১৭ মে থেকে ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগ শুরু হয়। এদের প্রত্যেকের ২৪ এবং ২৬ মে পর্যায়ক্রমে দুটি করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৭ জনের ২৪ তারিখে করোনা নেগেটিভ আসে। এর পর তারা শান্তিরক্ষা বাহিনীর মিশনে চলে গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ফ্যাভিপিরাভির নিচ্ছিলেন এমন ২৯ জনের মধ্যে বাকি দুজনের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, বাকি দু’জনের ৩০ তারিখে করোনা নেগেটিভ আসে। খবরটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে ডাঃ নূর বলেন, আজও আমাদের একটি সেমিনার হয়েছে সেখানে ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগে সফলতার কথা বলেছি। গত ২ জুন রাশিয়া দাবি করে তাদের উদ্ভাবিত এ্যাভিফ্যাভির ৩৩০ জনের ওপর প্রয়োগ করেছে। ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে সফলতার হার ৯০ ভাগের ওপরে দাবি করছে দেশটি। গত ১১ জুন থেকে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে আক্রান্তদের ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করছে। রাশিয়া বলছে, ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ্যাভিফ্যাভির প্রয়োগে ভাইরাস নেগেটিভ হচ্ছে। সেই হিসেবে গত ১৫ তারিখ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত রাশিয়ার সংক্রমণের হার মোটামুটি একই থাকলেও আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা বাড়তে থাকে। দেখা গেছে, গত ১৫ জুন রাশিয়াতে এ্যাক্টিভ করোনা আক্রন্ত মানুষ ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫৮০ জন। ওই দিন আট হাজার ২৪৬ জন নতুন আক্রান্ত হওয়ার পরও ১৬ তারিখে এ্যাক্টিভ করোনা রোগী ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৮ জন। ওই দিন রাশিয়াতে ১৪৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। একইভাবে ১৬ জুন ৮ হাজার ২৪৮ জন নতুন আক্রান্ত হওয়ার পরও ১৭ জুন ১৬ জুনের তুলনায় এ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে দুই হাজারের মতো। দ্যা মস্কো টাইমসের হিসাব অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ছয় দিনে রাশিয়াতে ৪৭ হাজার ৭৮৮ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে ছয় দিনে ৮৭২ জন মারা গেলেও সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৫০ জন। এবং নতুন আক্রান্ত হওয়ার পরও প্রতিদিন করোনায় এ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। দেশে ফ্যাভিপিরাভিরের অন্য যে ট্রায়ালটি চালিয়েছিল সেনাবাহিনী সেখানে সফলতার হার ৯২ দশমিক ৬ ভাগ বলে বিকন ফার্মার পরিচালক মঞ্জুরুল আলম জনকণ্ঠকে জানান। তিনি বলেন, ট্রায়ালটি চালিয়েছিলন মেজর জেনারেল ডাঃ আজিজ। তবে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, এর আগে করোনা চিকিৎসায় রেমডেসিভির প্রয়োগ শুরু হয়। ইবোলা ভাইরাসের প্রতিশেধক হিসেবে ব্যবহার হওয়া রেমডেসিভির প্রয়োগ করোনা নিয়ন্ত্রণে ভাল ফল দিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের দাবির পর দেশটির খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) রেমডেসিভির প্রয়োগের অনুমোদন দেয়। রেমডেসিভিরের মূল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্স ভারত এবং পাকিস্তানের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এর মধ্যেই দেশের দুটি কোম্পানি রেমডেসিভির তৈরি করে। এ ছাড়া করোনা চিকিৎসায় ইভারমেকটিন প্রয়োগে দেশে অভাবনীয় সাফল্য পাওয়ার দাবি করা হচ্ছে। এটিও পরজীবী ধ্বংসকারী ওষুধ। সরাসরি করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি নয়। ওষুধটি ইভেরা টুয়েলভ নামে বাজারে এনেছে বেক্সিমকো ফার্মা। অর্থাৎ করনো চিকিৎসায় ভাল কাজ করছে এমনটি জানার পর দেশেও সেই ওষুধ প্রস্তুত করে সরবরাহ করছে কয়েকটি কোম্পানি।
×