ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যগ্রহণ যেভাবে দেখা গেল ঢাকার আকাশে-

প্রকাশিত: ২২:২১, ২২ জুন ২০২০

সূর্যগ্রহণ যেভাবে দেখা গেল ঢাকার আকাশে-

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আষাঢ় মাস। রবিবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঢাকা। আশঙ্কা ছিল মেঘের কারণে এবারে সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যাবে না। নিরাশ হতে হয়নি শেষ পর্যন্ত। এ বছরের শেষ এই জাগতিক ঘটনা মেঘের ফাঁক গলে অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোন বিজ্ঞান সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিক কোন পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন ছিল না। তবে ব্যক্তিগতভাবে সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় সূর্যগ্রহণ শুরু হয় সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে। তবে গ্রহণ শুরুর এই সময়টা ছিল মেঘে ঢাকা। ফলে শুরুতে রাজধানীতে কেউ গ্রহণ প্রত্যক্ষ করতে পারেনি। কিন্তু দুপুর ১২টার পর থেকে মেঘ অনেকাংশে কেটে যেতে থাকে। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী গ্রহণের সর্বোচ্চ পর্যায় ছিল ১টা ১২ মিনিটে। কিন্তু এই সময় আকাশের ফাঁক গলে রোদের কিরণ দেখা যেতে থাকে। সর্বোচ্চ গ্রহণের এই সময় ভালভাবে প্রত্যক্ষ করা গেছে। কাঁটায় কাঁটায় সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয় ২টা ৫২ মিনিটে। এরপর থেকে আকাশ আবার মেঘে ঢেকে যায়। শুরু হয় বৃষ্টিপাত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই বছর দেশে আর সূর্যগ্রহণ হবে না। বছর শেষে যে গ্রহণ হবে তা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে দেখা যাবে। তবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চন্দ্রগ্রহণ রয়েছে। সেটা বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এফ আর সরকার বলেন, রবিবার সকাল থেকে আকাশে মেঘ থাকলেও দুপুরে গ্রহণ ভালভাবে দেখা গেছে। তিনি জানান, শুধু ঢাকা নয় সিরাজগঞ্জ পঞ্চগড় থেকেও এটি ভালভাবে দেখা গেছে। তিনি জানান এ বছর আর কোন সূর্যগ্রহণ বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে হলে আগামী ২১১৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রবিবার দুপুর থেকে বাংলাদেশে আংশিকভাবে গ্রহণ প্রত্যক্ষ করা গেলেও উত্তর ভারত, পাকিস্তানের দক্ষিণ ভাগ, চীন, তাইওয়ান, মধ্য আফ্রিকা থেকে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। আবহাওয়া অধিদফতর হিসাব অনুযায়ী, সূর্যগ্রহণ শুরু হয় কঙ্গোতে। ইথিওপিয়া হয়ে ইয়েমেন ওমান সৌদিআরব পাকিস্তান ভারতের উত্তর অংশ তিব্বত চায়না তাইওয়ান হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে শেষ হয়। সূর্যের বলয়গ্রাসের পথ ছিল ভারতের উত্তর অংশের ওপর দিয়ে। তাই উত্তর ভারতের একাংশ থেকেই এই বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায় বাংলাদেশের আকাশে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ছিল এই গ্রহণ। তবে মেঘের কারণে কম সময়ই প্রত্যক্ষ করা গেছে। বিজ্ঞানীরা জানান, ঢাকার আকাশে সূর্যের ৫০ শতাংশের বেশি ঢাকা ছিল সর্বোচ্চ গ্রহণের সময়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানান সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে ঘুরছে, একই সঙ্গে চাঁদ পৃথিবীর চার দিকে ঘুরছে। চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায় (কিছু সময়ের জন্য)। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। সূর্যগ্রহণে চাঁদ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলতে পারে, ফলে কোন স্থানে তখন হয় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। পূর্ণ সূর্যগ্রহণে সূর্য পুরো ঢাকা পড়ে যায় বলে সৌরমুকুট দেখা যায়। চাঁদ সূর্যের আংশিক ঢেকে রাখায় সংঘটিত হয় আংশিক সূর্যগ্রহণ। কিন্তু চাঁদের কৌণিক ব্যাস সূর্যের চেয়ে ছোট হলে হবে বলয় গ্রহণ। এদিকে উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন ছিল ২১ জুন রবিবার। এদিন ঢাকার আকাশে সূর্য ছিল ১৩ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট ১ সেকেন্ড। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দিনটি কর্কটক্রান্তি বা অয়ন দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এইদিনে কোন কর্মসূচী ছিল না। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতিবছর ২১ জুন সূর্য তার উত্তরায়নের সর্বোচ্চ বিন্দুতে অবস্থান করে, সর্বোচ্চ উত্তরে উদয় হয় এবং সর্বোচ্চ উত্তরে অস্ত যায়। কর্কটক্রান্তি রেখা বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে বলে এই দিনে বাংলাদেশের প্রায় সবখানে মধ্যাহ্নে সূর্য থাকে প্রায় মধ্যগগনে। বেলা ১২টায় ঢাকার আকাশে সূর্য থাকে মধ্যগগন থেকে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রী কৌণিক দূরত্বে। ওই সময় কর্কটক্রান্তি রেখায় কোন লাঠি খাড়াভাবে রাখলে তার ছায়া পড়বে না।
×