ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মদিনে সুস্থ পৃথিবীর প্রত্যাশায় নির্মলেন্দু গুণ

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২২ জুন ২০২০

জন্মদিনে সুস্থ পৃথিবীর প্রত্যাশায় নির্মলেন্দু গুণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবার এসেছে ফিরে সাতই আষাঢ়/কালোমেঘে আকাশ ভরিয়ে, প্রকৃতির চোখে কবিতার কাজল পরিয়ে/সে এসে ডাক দিয়েছে আমাকে/তার জন্মদিনের উৎসবে/এতদিন গুরু গুরু মেঘের গর্জনে/মিশেছিল বিদ্যুতের ডাক/মনে হয়েছিল এ শুধু ঝড়ের পূর্বাভাস/এ শুধু শিলাবৃষ্টির খেলা ...। আপন কবিতায় এভাবেই বর্ষার সঙ্গে মিলেমিশে নিজ জন্মোৎসবের বারতা দিয়েছেন নির্মলেন্দু গুণ। সাতই আষাঢ় শিরোনামের কবিতাটি ভাসছে কবির ফেসবুক পেজে। রবিবার ছিল সাতই আষাঢ়। আর বর্ষাঋতুর এই দিনটির রয়েছে ভিন্নরকম গুরুত্ব। এদিন ছিল আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই কবির ৭৬তম জন্মদিন। জন্মদিনের সকালে কবির সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধির। যদিও জন্মদিন নিয়ে নেই তার আলাদা কোন উচ্ছ্বাস। বছরের বাকি দিনগুলোর মতোই এদিনটিও যেন কেমন করে চলে যায়। তবে শুভাকাক্সক্ষীরা নানাভাবে শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানান কবিকে। কখনও বা তার অজান্তেই উদ্যাপিত হয়ে যায় বিশেষ দিনটি। আলাপচারিতায় নির্মলেন্দু গুণ বলেন, জন্মদিন নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। তাই উদ্্যাপনের বাগাড়ম্বরও নেই। বছরের অন্যদিনের মতোই নিজের মতো কেটে যায় সময়। এ নিয়ে থাকে না কোন পৃথক পরিকল্পনা। তবে শুভাকাক্সক্ষীদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে খুব আগ্রহ প্রকাশ করে। এতে এক ধরনের ভাললাগা কাজ করে। আবার উল্টোদিকে মানসিক চাপ তৈরি হয়। আমি সব সময় চাপমুক্ত থাকতে চাই। তার ওপর এ বছর বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছে ভিন্ন পরিস্থিতি। মহামারী বদলে দিয়েছে জীবনের গতিপ্রকৃতি। প্রতি মুহূর্তে ঝরছে প্রাণ, বিরাজ করছে আতঙ্ক। এই পৃথিবীর শরীরে আজ বাসা বেঁধেছে গভীর অসুখ। তাই জন্মদিনে সম্পূর্ণ সুস্থ এক পৃথিবীর প্রত্যাশা করছি। স্বরূপে ফিরুক এই পৃথিবীর প্রাণ ও প্রকৃতি। কবি না চাইলেও তার জন্মদিনকে ঘিরে ছিল নানা তৎপরতা। জলংরয়ের আশ্রয়ে গুণের প্রতিকৃতি এঁকেছেন কামাল পাশা চৌধুরী। সেই ছবির মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে কবির জন্মোৎসব উদ্যাপন করেছেন এই শিল্পী। চিত্রকর্মটি আপলোড করা হয়েছে কবির ফেসবুক পাতায়। রবিবার সকালে চ্যানেল আইয়ের তারকা কথন অনুষ্ঠানে ভিন্নভাবে উদ্যাপিত হয়েছে জন্মদিন। এতে কবির কবিতা ও স্বভাব নিয়ে আলাপচারিতায় অংশ নেন তরুণ কবি মৃত্তিকা গুণ ও নির্মাতা পথিক মাসুদ। এর বাইরে রাতে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে আরেকটি আয়োজন। ‘ও বন্ধ আমার’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রজাপতির মেলা নামের সংগঠন। এতে অংশ নেন দুই বাংলার আবৃত্তিশিল্পীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন মীর বরকত, শারমিন লাকী, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, হাবিবা হ্যাপী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, অশেষ দে, বর্ণালী সরকার প্রমুখ। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবির নামটি হচ্ছে নির্মলেন্দু গুণ। ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবন গ্রামে জন্মেছিলেন এই কবি। তার মা বীণাপাণি আর বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ। স্কুলজীবনেই নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শ্রেণীসংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, জীবন-প্রকৃতি আর স্বপ্ন দেখার অলীক ঘোর তার কবিতার প্রাণশক্তি। কবিতার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গল্প, আত্মজৈবনিক গ্রন্থের পাশাপাশি ভ্রমণসাহিত্যও রচনা করেছেন নির্মলেন্দু গুণ। প্রথম কবিতার বই ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ লিখেই কাব্যজগতে নিজের আসন স্থায়ী করে নেন তিনি। পারিবারিক জীবনে মৃত্তিকা গুণ নামের এক কন্যা সন্তানের জনক নির্মলেন্দু গুণ। তিনি নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘কাশবন’। যার মধ্যে রয়েছে সঙ্গীত ও চিত্রাঙ্কন বিদ্যালয়, সংগ্রহশালা, গ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের জন্য মুক্তমঞ্চ। তিনি ‘কাশবন বিদ্যানিকেতন’ নামে একটি বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়া নেত্রকোনার মালনীতে কবিদের আড্ডার জন্য ‘কবিতাকুঞ্জ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্মলেন্দু গুণ ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১১ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।
×