ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা পরীক্ষার নমুনা জটে বেসামাল পরিস্থিতি চট্টগ্রামে

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২২ জুন ২০২০

করোনা পরীক্ষার নমুনা জটে বেসামাল পরিস্থিতি চট্টগ্রামে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান হটস্পট বন্দরনগরী চট্টগ্রামে উপসর্গ নিয়ে রোগীদের থেকে সংগৃহীত নমুনার বড় ধরনের জট লেগেছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮শ’ নমুনা পরীক্ষার সুবিধা থাকলেও সংগৃহীত হচ্ছে প্রায় পনেরো শ’। ফলে প্রতিদিন বাড়তি নমুনার জট লেগে তা ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া জটের কারণে ঢাকায় যে ৩ হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল তন্মধ্যে মাত্র এক হাজারের রিপোর্ট এলেও অধিকাংশ নমুনা হারিয়ে গেছে বলে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগীয় বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। জটের কারণে করোনা পজেটিভ রোগীদের দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা করার যে নিয়ম ছিল তা বাদ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ নগরীতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, সিভাসু (চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়) , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোর মধ্যে যে দুটিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ছাড়া অন্যটিতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। কি কারণে যায়নি এর কোন ব্যাখ্যাও নেই। তবে বেসরকারী নির্দিষ্ট বারোটি হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগীদের ভর্তি করানো হচ্ছে। কিন্তু আইসিইউ সুবিধা অধিকাংশ ক্ষেত্রে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস) এ জেলাসহ বিভাগীয় বিভিন্ন শহর থেকে আসা নমুনার বড় ধরনের জট সৃষ্টি হয়েছে। চাপ সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। এর ফলে নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগীদের অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর গুনতে হচ্ছে। অনেকে রিপোর্ট আসার আগে মৃত্যুবরণ করছেন আবার অনেকে সুস্থ হয়েও যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৪০। প্রতিটি হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। এতে অনেকের ভাগ্যে চিকিৎসা জুটলেও আবার অনেকে চিকিৎসা না পেয়েই মৃত্যুবরণ করছে। এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, নমুনা পরীক্ষায় যেমন জট লেগেছে তেমনি পরীক্ষার জন্য কর্মী বাহিনীরও স্বল্পতা রয়েছে। কিছুদিন আগে বিআইটিআইডির সাত চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এটি তিনদিন বন্ধ রাখা হয়। এর পর আবার নতুন করে কর্মকা- শুরু করা হয়। এ সময়ও বড় ধরনের একটি নমুনার জট লেগেছে। জটের ফলে ঢাকায় ৩ হাজার নমুনা প্রেরণ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে মাত্র এক হাজারের ফল এসেছে। বাকিগুলো কবে আসবে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ তা জানে না। করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগীদের হাহাকার চলছে। সরকারী চমেক, জেনারেল হাসপাতাল, বেসরকারী মা ও শিশু হাসপাতালসহ যেসব ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতালে করোনা রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন তাদের ভর্তি হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। বিশেষ করে সিট সঙ্কটের কথা বলে অধিকাংশ রোগীর ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও ভর্তি হতে প্রচন্ড বেগ পেতে হচ্ছে। কেননা, করোনামুক্ত সার্টিফিকেট ছাড়া রোগীদের ভর্তির প্রক্রিয়ায় নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়টি নগরজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম নিয়েছে। প্রতিটি বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বর্তমান সময়ে করোনাসহ যে কোন রোগীকে ফিরিয়ে দিতে পারলে যেন রক্ষা পায়। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, যা কখনও কাম্য হতে পারে না বলে বিভিন্ন সূত্রে মত ব্যক্ত করা হয়েছে। হটস্পট চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও বেড়েই চলেছে। হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা চলছে, অনেকাংশে সম পরিমাণ রোগী নিজ বাড়িতে থেকেই নিজ উদ্যোগে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে আইসোলেশনে আছেন। অনেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় করে অক্সিজেন সুবিধা নিচ্ছেন। এসব রোগীর হিসাব সরকারী খাতায় নেই। শুধু তাই নয়, বেসরকারী পর্যায়েও এর কোন হিসাব নেই। ফলে প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগীয় বুলেটিনে চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত, মৃত্যু, সুস্থ হওয়ার যে পরিসংখ্যান দেখানো হয় সে সংখ্যা বাস্তবিক অর্থে অনেক কম।
×