ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন-ভাতা নয়, খরচ কমানোর পক্ষে অধিকাংশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২২ জুন ২০২০

বেতন-ভাতা নয়, খরচ কমানোর পক্ষে অধিকাংশ ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ এ পর্যন্ত মাত্র চারটি বেসরকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়েছে। বেতন কমাবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছে পাঁচটি ব্যাংক। তবে বেতন-ভাতা নয়, সব ধরনের খরচ কমিয়ে আনতে মত দিয়েছে অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংক। এর মধ্যে ভবন ভাড়া, বিদ্যুত বিল, স্টেশনারি ও প্রিন্টিংসহ যাতবতীয় খরচ সহনীয় মাত্রায় আনতে চায় ব্যাংকগুলো। এ ধরনের খরচ কমাতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সারাদেশে অবস্থিত শাখাগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোর বিষয়ে ব্যাংকে ব্যাংকে চিঠি দেয় বেসরকারী ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। একইসঙ্গে কর্মীদের পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেন্টিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ব্যাংক বাঁচাতে ১৩ দফা সুপারিশ করেছিল সংগঠনটি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাংকে ব্যাংকে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহামারী করোনার প্রকোপ সামলাতে গিয়ে বেসরকারী খাতের সিটি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৬ শতাংশ বেতন-ভাতা কমিয়েছে। আর ১৫ শতাংশ বেতন কমিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। বিএবি’র পরামর্শের আলোকে মে ও জুন মাসের বেতন ৫ শতাংশ কমিয়েছে এবি ব্যাংক। আর আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন কমিয়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে ইউসিবি ও এসবিএসি ব্যাংকের পর আরও পাঁচটি বেসরকারী ব্যাংক কর্মীদের বেতন না কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। করোনা সঙ্কট সামাল দিতে ব্যাংক কর্মীদের বেতন কমানোর বিএবি’র পরামর্শ মানছে না প্রাইম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংকও কর্মীদের বেতন না কমানোর পক্ষে। আর এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি দেশের বড় বেসরকারী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আমানতকারীদের সুদ পরিশোধের পর সবচেয়ে বেশি খরচ বেতন-ভাতায়। এরপর ভাড়া ও বিদ্যুত বিলে। এরপরই খরচের বড় খাত স্টেশনারি, প্রিন্টিংয়ে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে নিরাপত্তা সঞ্চিতি, তার পরিমাণ কোন কোন ব্যাংকের বেতন-ভাতার চেয়ে বেশি। তবে যেকোন ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হলো বিতরণকৃত ঋণ থেকে প্রাপ্ত সুদ। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ফি আর এলসি কমিশন থেকেও বড় অংকের আয় করে থাকে ব্যাংকগুলো। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর এ ধরনের আয় আগের তুলনায় কমে গেছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রাহকদের খেলাপি না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের সুদও। এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য সচল আছে, এমন সামর্থ্যবান গ্রাহকরাও ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ রেখেছেন। আমদানি-রফতানিসহ দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসায় ব্যাংকের কমিশন আয়ও নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশে। এ অবস্থা দেশের প্রায় সব ব্যাংকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে ব্যাংকগুলো, বিশেষত বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো এখন ব্যয় সংকোচনেই জোর দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মূলত প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণযোগ্য ব্যয় হ্রাসের ওপরই ব্যাংকগুলো জোর দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে জোর দেয়া হচ্ছে নতুন কর্মী নিয়োগ না দেয়া, নতুন শাখা না খোলা, বিদ্যমান শাখার সংখ্যা ও পরিসর কমিয়ে আনা, স্টেশনারি ব্যয় হ্রাস, কর্মীদের টিএ-ডিএ বিলে কাটছাঁট ও বিদ্যুতসহ অন্যান্য ইউটিলিটি বিল কমিয়ে আনার ওপর। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ, পরিচালকদের নামে-বেনামে নেয়া ঋণ আদায় ও পরিচালকদের বিভিন্ন ধরনের অবৈধ সুবিধা বন্ধ করা গেলে কর্মী ছাঁটাই বা বেতন কমানোর পথে হাঁটতে হবে না ব্যাংকগুলোকে। প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী বলেন, সংকট মোকাবেলার জন্য আমরা ব্যয় সংকোচন করব ঠিক, কিন্তু সেটা ভিন্ন পথে। পরিবারের সদস্যদের বেতন কমিয়ে নয়। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সারাদেশে আমাদের যে শাখাগুলো আছে সেগুলোর ভাড়া কমানোসহ অন্যান্য খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। যাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে শাখাগুলো করা হয়েছে তাদের সংকটের কথা বুঝিয়ে ভাড়া কমানোর চেষ্টা করছি। সবাই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর কোন চিন্তা আমরা করছি না। তবে এ কথা ঠিক যে এই বছরে ব্যাংকের মুনাফা অনেক অনেকাংশেই কমে যাবে। কিন্তু সেটার কারণে কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত ব্র্যাক ব্যাংক নেবে না।’ এদিকে বেতন না কমাতে এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে সরাসরি কোন নির্দেশনা না দিলেও ব্যাংকারদের উজ্জীবিত রাখতে বলেছে।
×