ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বাঁচতে হলে সতর্কতার বিকল্প নেই’

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২২ জুন ২০২০

‘বাঁচতে হলে সতর্কতার বিকল্প নেই’

রুমেল খান ॥ শাহনাজ পারভীন মালেকা বাংলাদেশ নারী কাবাডির ইতিহাসের সেরা ও কিংবদন্তি খেলোয়াড়। দলের অধিনায়ক হিসেবে ২০১৯ এসএ গেমস কাবাডি খেলে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। ২০০৫ সালে কাবাডি ক্যারিয়ার শুরু করেন মালেকা। অসাধারণ সব অর্জন ও প্রাপ্তি আছে তার। ২০১০ গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ (দলের অধিনায়ক ছিলেন), ২০১০ ম্যাটে সাউথ এশিয়ান গেমসে রৌপ্য, এশিয়ান বিচ গেমসে ব্রোঞ্জ (দলের অধিনায়ক), ২০১৪ ইনচন এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ এবং ২০১৬ এসএ গেমসে রৌপ্যজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন মালেকা। তবে ইনচনে জেতা সেই ব্রোঞ্জ হারিয়ে বসেন ইন্দোনেশিয়ার এশিয়াডে। সেই আক্ষেপে এখনও পোড়েন মালেকা। মালেকার জন্ম ১০ নবেম্বর, ১৯৮৫ সালে। পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার ছোট বোন ময়না বেগমও জাতীয় মহিলা কাবাডি দলের খেলোয়াড়। মালেকা বাংলাদেশের সেই বিরল খেলোয়াড়দের একজন যিনি ফুটবল, হ্যান্ডবল এবং কাবাডি ... এই তিনটি জাতীয় দলে খেলেছেন। কাবাডি খেলোয়াড় হিসেবে তার পজিশন দুটি। একটি লেফট কভার, অন্যটি রেইডার। দুটি পজিশনেই খেলতে পারলে তখন তাকে অলরাউন্ডার বলা হয়। কাবাডিতে মালেকার আদর্শ দেশে জিয়াউর রহমান, বিদেশে ভারতের প্রো-কাবাডি তারকা নবীন কুমার। দীর্ঘ ১৪ বছর দেশের নারী কাবাডিকে অনেক পদক এনে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক কাবাডি থেকে অবসর নিলেও ঘরোয়া আসরে আনসারের হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে চান মালেকা (এখন আনসারের খেলোয়াড়ের পাশাপাশি সহকারী কোচও তিনি)। কিন্তু ভয়াবহ করোনার কারণে পারছেন না। কেমন কাটছে তার করেনোর দিনলিপি? জনকণ্ঠকে মালেকা জানান, ‘দুই মাস ধরে বাসা থেকে বের হই না। সাবান দিয়ে কয়েকবার করে ভালমতো হাত ধুই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি।’ মালেকার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। তবে গাজীপুরের শফিপুর আনসার একাডেমির কাছাকাছি রতনপুরে থাকেন। বাড়িতে মালেকা থাকেন ব্যবসায়ী স্বামী আমিনুল ইসলাম (তাকে বিয়ে করেন ২০০১ সালে) এবং একমাত্র সন্তান মেয়ে আশা আক্তারের (এসএসসি পাস করেছে) সঙ্গে। করোনা নিয়ে মালেকার অভিমত, ‘বাঁচতে হলে ঘরে থাকতে হবে। জরুরী দরকারে বাইরে গেলেও কোথাও ভিড় করা যাবে না। সব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’ করোনার বিস্তার নিয়ে বলেন, ‘করোনা ছড়ানোর জন্য প্রবাস ফেরত বাংলাদেশীরাই দায়ী। তাদের যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হতো, তাহলে এই বিপর্যয় হতো না। আমাদের দেশে করোনা নিয়ে সচেতনতা হচ্ছে মিশ্র পর্যায়ের। কিছু কিছু মানুষ সচেতন। কেউ আবার রাস্তাঘাটে হাত ধরে হাঁটে।’ করোনার কারণে নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র মানুষরা যে কি কষ্টভোগ করছে, তা আশপাশে নিজের চোখেই দেখছেন মালেকা। ‘তবে আমি যে এলাকায় থাকি, সেখানেই অনেকেই এই অসহায়দের খাদ্য ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। বিত্তবানরা যদি এভাবে এগিয়ে আসেন, তাহলে কোন সমস্যা হবে না।’ মালেকার ভাষ্য। চাল, ডাল, তেল চোর জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মালেকার মূল্যায়ন, ‘তাদের নিয়ে কি আর বলব! তাদের কোন মানসম্মান আছে বলে মনে হয় না। এরা হয় তো মনে করে টাকা খরচ করে নির্বাচনে পাশ করেছি। তাই এখন এসব আত্মসাৎ করে সবকিছু উসুল করতে হবে! এই হচ্ছে তাদের মানসিকতা, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়!’ করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেকে। এটা খুবই দুঃখজনক, এসব মোটেও বাঞ্ছনীয় নয় বলে জানান মালেকা। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা আজব এক জাতি। এখন কেউ মারা গেলে আমরা তার জানাজায় অংশ নিতে চাই না, ভয় পাই। অথচ কোন পীর মারা গেলে তার জানাজা পড়তে লাখে লাখে ঝাঁপিয়ে পড়ি পাগলের মতো আর করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিকে শতগুণে বাড়িয়ে তুলি। আমি বুঝি না- আল্লাহ্ আর নবী-রাসুলের পর তো কাউকে মানার দরকার নেই। তাহলে মানুষ পীরদের এত মানে কেন? তারা কি নবী-রাসুলের চেয়েও বড়?’ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর সরকার যখন ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করল, তখন প্রচুর মানুষ নিজেদের গ্রামের বাড়িতে এবং কেউ কেউ বেড়াতে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেলেন। এ প্রসঙ্গে মালেকার ভাষ্য, ‘এটা একমই ঠিক হয়নি। এতে করোনার বিস্তার কয়েকগুণ বেড়েছে। এছাড়া গার্মেন্ট খোলা নিয়ে মালিকরা যে নাটক করেছে, সেটার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এগুলো অন্যায়।’ করোনা থেকে রেহাই পেতে ভারতের হিন্দুরা গোমূত্র পান করেছে। এ নিয়ে মালেকা বলেন, ‘এগুলো একেবারেই কুসংস্কার এবং ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস। এতে মোটেও করোনা সারে না। সব মিথ্যা। গত বছর এসএ গেমসে নেপালে যাওয়ার আগে দুই মাস ভারতের হরিয়ানায় আমরা অনুশীলন করতে গিয়েছিলাম। তখন সেখানে নিজের চোখেই দেখেছি হিন্দুরা গরুকে নিয়ে কি পরিমাণ মাতামাতি করে, মা হিসেবে পূজা করে। কাজেই তারা যে পরম ভক্তি নিয়ে গরুর পেশাব খাবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।’
×