ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ

প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ২২ জুন ২০২০

প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল

ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ়কে বলা হয় ঋতুর রানী। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বতন্ত্র। বর্ষা কাব্যময়, প্রেমময়। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। শত ঘটনার ভিড়েও কোথায় যেন মেলে এক চিলতে বিশুদ্ধ সুখ। বর্ষার এ সময়ে পুষ্প-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে সবকিছুর মধ্যে। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ গ্রাম কিংবা নগরবাসী সবাইকে মুগ্ধ করে এ সময়ে। গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সেজেছে পূর্ণতায়। নদীতে উপচে পড়া জল, আকাশে মেঘের ঘনঘটা এরই মাঝে হঠাৎ মেঘরাজের গর্জন। মেঘের ডাকে যেন বৃষ্টি কাঁদছে। যে কথাটি বলি বলি করেও বলা হয় না, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল নিয়ে যেন তারই আসার অপেক্ষা। বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা, কদম নাম না জানা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। প্রকৃতি থেকে শুরু করে গান, কাব্য, কবিতায় বাঙালী জীবন প্রবাহের প্রতিটি পরতে রয়েছে বর্ষার প্রত্যক্ষ প্রভাব। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। এটি বর্ষা মৌসুমে অন্তর্ভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। আর নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বাঙালী জীবন অকল্পনীয়। বাঙালীর রোমান্টিকতায় বৃষ্টি আর বিকেল– দুটোই কোনদিন ফুরবে বলে তো মনে হয় না। বর্ষার দিনে টিনের চালে ঝাপুরঝুপুর, গাছের ডালে টাপুরটুপুর, পুকুর জলে রিনিঝিনি বৃষ্টির ছন্দে উদাস হয় মন। বৃষ্টি ঝরে হাটে-মাঠে-নদী ও পাহাড়ে। প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। হেসে ওঠে সবুজরঙা গাছপালা, ডেকে ওঠে কোলাব্যাঙ, পুকুর জলে টুপটুপ ডুব দিয়ে আনন্দে খেলা করে হাঁসের ছানা। টইটম্বুর পানিতে ঢেউ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ। চারদিকে থৈ থৈ পানি। যেন নতুন সমুদ্র জেগেছে গ্রামজুড়ে। দুষ্টু ছেলেরা কলাগাছ কেটে ভেলা বানায়। কলার ভেলায় চড়ে আনন্দে মেতে ওঠে দুরন্ত কিশোরের দল। ঝাঁপ দেয় পানিতে, ডুব সাঁতারে হার মানায় পানকৌড়িকেও। কেউ কেউ গাছে চড়ে লাফ দেয় দীঘির পানিতে। বড়দের শাসানি পেয়ে বাড়ি ফেরে অবশেষে। ঘরের দাওয়ায় বসে বৃষ্টির ঝরে পড়া দেখতে বেশ ভালই লাগে। এ সময় দাদিরা গল্পের ঝুলি খোলেন। ছোটদের জড়ো করে রূপকথার রাজ্য, দৈত্য-দানব-ডাইনি বুড়ি আর রাক্ষসের গল্প শোনান কেউ কেউ। তবে বর্ষা এলে নগরজীবনে ভোগান্তিও বেড়ে যায়। জলাবদ্ধতা একটি ভয়াবহ দুর্যোগ হওয়ায় এ জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরী। কার্যকর উদ্যোগ ও যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকা শহর হতে পারে পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত শহর। আমরা চাই বর্ষা যেন নগরজীবনেও কাব্যের আমেজ আনে। কদম ফুলের হাসি-ঘ্রাণে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও যেন জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা ভুলে থাকতে পারি। অন্যদিকে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে বর্ষাকে ঘিরে নানা আয়োজন। কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বর্ষাকে বরণ করে ভিন্ন মাত্রায়। প্রতি বছর তারা কক্সবাজর সমুদ্র সৈকতে মাসব্যাপী বর্ষাবরণ উৎসবের আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা এ বর্ষাবরণ উৎসবে যোগ দেয়। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই দেখা মিলবে বৃষ্টির দেখা মিলবে। আকাশের ভাষাও তাই। তবে মনে রাখবেন, কদম হচ্ছে বর্ষার দূত! এবছর বর্ষার আগমনের আগেই গাছে গাছে স্বর্ণগোলক কদম ফুটেছে প্রকৃতির নিয়মে। বর্ষা এবং কদম ফুলের প্রসঙ্গ এলেই যেন এগুলোর সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে থাকে রবীন্দ্রনাথ! তিনি লিখেছেন- ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান, মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে, এই যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান।’
×