ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের সেই উদযাপন বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখনও রূপকথা

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২১ জুন ২০২০

তামিমের সেই উদযাপন বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখনও রূপকথা

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার তামিম ইকবালই একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি শুধু বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেটের তীর্থভূমি খ্যাত লর্ডসে সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। আর তাতে করে লর্ডসের অনার্স বোর্ডেও নাম লিখিয়েছেন। সেই স্মৃতি এখনও তামিমের কাছে উজ্জ্বল। ১০ বছর পর স্মৃতিচারণও করলেন। ২০১০ সালের ৩০ মে ঐতিহাসিক সেই সেঞ্চুরিটি করেছিলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৪ বলে ১০০ রান করার পর ১০০ বল খেলে ১০৩ রান করতেই আউট হয়ে যান। তবে সেঞ্চুরি করার পর যে শূন্যে লাফ দিয়ে উল্লাস করেছিলেন তা এখনও স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করে। তামিম আবার সেই স্মৃতি সামনে তুলে আনলেন। লর্ডসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম, জুনায়েদ সিদ্দিকী, ইমরুল কায়েস, জহুরুল ইসলাম, আফতাব আহমেদ, খালেদ মাসুদ পাইলট, জাভেদ ওমর, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ আশরাফুল, হাবিবুল বাশার, নাফিস ইকবালরা ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন। এরমধ্যে মুশফিক ও আশরাফুল ২টি টেস্ট খেলারও সুযোগ পেয়েছেন। তবে কাজে লাগিয়েছেন একমাত্র তামিম। তিনি এক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৫ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ রান করেছেন। বাংলাদেশ থেকে তো ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তামিমই লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান। বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের মধ্যে ভারতের সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, ভিভিএস লক্ষণ, শচীন টেন্ডুলকর, বীরেন্দর শেবাগ, বিরাট কোহলি লর্ডসে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার ইয়ান চ্যাপেল, রিকি পন্টিং, মাইক হাসি, এ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ডেভিড ওয়ার্নার; ইংল্যান্ডেরই মাইক আথারটন, গ্রাহাম থর্প, মাইক গ্যাটিংরা; নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, রস টেইলর, নাথান এ্যাসলে, জন রাইট, স্টিফেন ফ্লেমিং, ডেনিয়েল ভেট্টরিরাও পারেননি। পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার, ইউনিস খান, ইমরান খান, জহির আব্বাস, আমির সোহেল, সেলিম মালিকরা; দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস, হেনসি ক্রনিয়ে, এবি ডি ভিলিয়ার্সরা; শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনথ জয়সুরিয়ারা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড, ব্রায়ান লারারাও যেখানে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অনার্স বোর্ডে নাম লেখাতে পারেননি, সেখানে তামিম তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। এই স্মৃতি তো অমলিন হয়ে থাকবেই। সেঞ্চুরি হতেই দৌড়ে গিয়ে একটা লাফ দিলেন। এরপর কয়েকবার জার্সিও পেছন দিকে হাত দিয়ে ড্রেসিং রুমের দিকে দেখালেন। উদযাপনের ভঙ্গিতেই বোঝা গিয়েছিল তামিম ইকবাল কি বলতে চেয়েছিলেন। পরীক্ষায় পাস করেছি, এবার অনার্স বোর্ডে আমার নাম তুলে ফেলো। তামিমের এই উদযাপন এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথারই অংশ হয়ে গেছে। এ স্মৃতি নিয়ে ক্রিকেটার গড়ার কারিগর শহিদুল আলম রতনের সঙ্গে টিভিএস লক্ষণের ফেসবুক লাইভ শোতে তামিম বলেন, ‘৭০ থেকে ১০০ খুব দ্রুতই হয়ে গিয়েছিল। আমি ভাগ্যবান যে সে সময় বেশ কিছু বাউন্ডারি পেয়েছিলাম। আমি যখন ৯৬ বা ৯৭ রানে ছিলাম একটা বাউন্ডারি মেরেছিলাম। সিঙ্গেল নেয়ার মতো ধৈর্য ছিল না। যত দ্রুত সম্ভব আমি সেঞ্চুরি করতে চাইছিলাম। এটাই আমার মাথায় চলছিল। প্রথম ইনিংসে আমি হাফ সেঞ্চুরি করেই আউট হয়ে গিয়েছিলাম। অনার্স বোর্ডে নাম উঠানো অনেক বড় একটা জিনিস।’ লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ চার আর ২ ছয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তামিম। প্রথম ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু অনার্স বোর্ডে তো আর হাফ সেঞ্চুরি করলে নাম জড়ায় না। বাংলাদেশের এই ওপেনারের আক্ষেপ ছিল। তা পরের ইনিংসেই দূর হয়ে যায়। তামিম জানান, ‘আমি যদি ঠিক বলে থাকি, ড্রেসিং রুমে পিটার নামের একজন ছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি কি ফিফটি রানের জন্য একটা বোর্ড বানাবে? আমি তোমাকে এর খরচা দেব। কারণ আমি সেঞ্চুরি করতে পারিনি। কোণায় তুমি একটা বোর্ড বানাও যেখানে আমার নাম থাকবে। যখন আমি সেঞ্চুরির খুব কাছে পৌঁছলাম। এই সুযোগটা আমি হারাতে চাইনি।’ তামিমের আগেই অবশ্য পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব অনার্স বোর্ডে নাম লেখান। ৫ উইকেট নিয়ে নাম লেখান। এরপর তামিম নাম লেখান। সর্বশেষ মুস্তাফিজুর রহমান নাম লেখান।
×