ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘সংগ্রামী ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায় কামাল লোহানী’

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২১ জুন ২০২০

‘সংগ্রামী ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায় কামাল লোহানী’

মনোয়ার হোসেন ॥ বর্তমান সময়ের তার মতো মানুষ মেলা ভার। আদর্শকে ধারণ করেই কাটিয়ে দিলেন পুরোটা জীবন। আমৃত্যু স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। সাধারণের ভেতর থেকেও অসাধারণ মানুষের প্রতিচ্ছবি মেলে তার জীবনে। লোভ-লালসা কখনও ছুঁতে পারেনি তাকে। পেশাগত জীবনে নির্ভীকভাবে সাংবাদিকতা করেছে। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সংগ্রামী আদর্শ মিশেছিল তার জীবনের প্রতিটি বাঁকে। ব্যক্তিগত লোভের কাছে কখনও নত হননি। সব মিলিয়ে এ দেশের সংগ্রামী ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় কামাল লোহানী। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে জেলও খেটেছেন। সাংবাদিক হিসেবে লিখেছেন অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে। সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবেও আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন সোচ্চার। একাত্তরে পরিবার-পরিজন ফেলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ছায়ানট পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর। নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি নিজেও শিল্পী ছিলেন। খুব ভাল আবৃৃত্তি করতেন। মঞ্চনাটক করেছেন। পাশাপাশি নাচও করেছেন। সাধারণত একজন মানুষের মধ্যে এত গুণ দেখা যায় না। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক কামাল লোহানীকে এভাবেই মূল্যায়ন করলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আফসোস করে এই প্রাবন্ধিক ও লেখক বলেন, খুবই অসময়ে তিনি চলে গেলেন। আমরা শ্রদ্ধা জানানো সুযোগটুকুও পেলাম না। এই মানুষটির জন্য হৃদয়ে মর্মান্তিক এক বেদনা অনুভব করছি। কামাল লোহানী প্রয়াণে এভাবেই বেদনায় সিক্ত হয়েছে শিক্ষাবিদ-সংস্কৃতিজনসহ বিশিষ্টজনদের অন্তর। বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের প্রতি তাদের ভালবাসা ও অনুভবের কথা মেলে ধরা হলো এই লেখায়। কামাল লোহানীর মৃত্যুতে অভিভাবকের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। তিনি বলেন, আমরা একটি বড় আশ্রয় হারালাম। তাকে দেখে আমরা অনুকরণ ও অনুসরণ করতাম। বিরূপ সময়কে উপেক্ষা করে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থেকেছেন সব সময়। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করেছেন। আজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। কখনও আপোস করেননি। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং পূর্বকালীন সময়ে সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন কামাল লোহানী। ষাটের দশকে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে এগিয়ে নেয়ার কাজটি করেছেন আপন শ্রম ও মেধায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে আমৃত্যু সংগ্রামের মাঝেই নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সব সময়ই ছিলেন সোচ্চার। তার অবিচলিত নেতৃত্বের সেই অভাবটি আজ অনুভব করছি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব থেকেই সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচার বিরোদী আন্দোলনে রেখেছেন অসীম সাহসী ভূমিকা। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। তার মৃত্যুতে আমরা একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক হারালাম। এজন্য তার আদর্শকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে আগামীর পথে। তাহলেই আমরা খুঁজে পাব সোনার বাংলার স্বপ্নমাখা স্বদেশের প্রকৃত ঠিকানা।
×