ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন প্রগতির আলোকবর্তিকা কামাল লোহানী

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২১ জুন ২০২০

চলে গেলেন প্রগতির আলোকবর্তিকা কামাল লোহানী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমার মৃত্যু যেন আত্মত্যাগের মাধ্যমেই শেষ হয়। এই ব্রত নিয়েই আমি রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চায় করেছে। ত্যাগের মাঝেই জীবনের সাফল্যের সন্ধানী এই মানুষটি হচ্ছেন লোহানী। স্বদেশ ও সমাজের প্রতি দায়বোধ সম্পৃক্ত হয়েছিলেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেখেছেন সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক হিসেবেও ছিলেন অকুতোভয়। শনিবার না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই ভাষাসংগ্রামী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক। চিরবিদায় নিলেন প্রগতিশীল চেতনার আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিচিত এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। সকাল সোয়া ১০টার দিকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন। এ সময় চিকিৎসকরা পরিবারের সম্মতিতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে মৃত ঘোষণা করেন। কামাল লোহানীর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। রেখে গেছেন এক ছেলে সাগর লোহানী এবং দুই মেয়ে বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভাকাক্সক্ষী। শনিবার দুপুরে তার শবদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর শেখেরটেকের কোয়ান্টম ফাউন্ডেশনে। সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী গোসল করানো হয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় তার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খান সনতলা। সেখানে জানাজা শেষে বাদ এশা কামাল লোহানীকে তার স্ত্রী দীপ্তি লোহানীর কবরে সমাহিত করা হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। কামাল লোহানী দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা ছাড়াও হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের সমস্যাতেও ভুগছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৭ জুন সকালে তাকে হেলথ এ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার তার কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতাল থেকে শুক্রবার বিকেলে তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সিভিয়ার নিউমোনিয়া ছিল। পাশাপাশি উচ্চ ডায়াবেটিকস, কিডনি ও হার্টেও সমস্যা ছিল। মূলত তার মাল্টি অর্গান ফেইলার ছিল। কামাল লোহানীর প্রয়াণে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, পরিবেশ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি- জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান পান্না কায়সার, বিএমএমইউয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদারসহ অনেকে। এছাড়াও সাংগঠনিকভাবে শোক জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাসদ, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। কামাল লোহানীর মৃত্যুতে দেয়া শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সাংবাদিকতার পাশাপাশি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে কামাল লোহানী বিপুল অবদান রেখেছেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনসহ বাঙালী সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে তিনি ছিলেন একজন পুরোধা ব্যক্তি। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একজন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অসাধারণ যোদ্ধাকে হারালাম। একজন আদর্শবান মানুষ হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠা এবং দেশের সংস্কৃতি বিকাশের আন্দোলনে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনে সাংবাদিক হিসেবে, সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে কামাল লোহানী ছিলেন এক অকুতোভয় যোদ্ধা। ষাটের দশক থেকে রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক আন্দোলন যখন এক পথে মিলে গিয়েছিল তখন থেকেই তিনি এ দুই পথেরই যোদ্ধা। এ দেশের ঐতিহাসিক নানা ঘটনার সঙ্গে রয়েছে তার যুক্ততা। ১৯৬১ সালে অন্য অনেকের সঙ্গে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে তার ছিল দৃঢ় ভূমিকা। রবীন্দ্র শতবর্ষ পালনে পাকিস্তানী নিষেধাজ্ঞা জারি হলে ছায়ানটের নেতৃত্বে কামাল লোহানী ও হাজারও রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কর্মী সাহসী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ষাটের দশকের শেষ ভাগে ন্যাপের (ভাসানী) রাজনীতিতে জড়িয়ে কামাল লোহানী যোগ দেন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলার শিল্পীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তার সঙ্গেও কামাল লোহানী পুরোপুরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন। পূরণ হলো না শেষ ইচ্ছা ॥ কামাল লোহানীর শেষ ইচ্ছা ছিল মরণোত্তর দেহদান। করোনাকালে তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান ছেলে সাগর লোহানী। তিনি বলেন, বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল মরণোত্তর দেহদান। যার জন্য তিনি আন্দোলনও করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারলাম না। করোনাকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহদান করা সম্ভব না। শেষ শ্রদ্ধায় কামাল লোহানী ॥ শনিবার দুপুরে কামাল লোহানীর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাজধানীর তোপখানা রোডে উদীচীর কার্যালয়ে নেয়া হয়। এ সময় উদীচীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়াও, জাতীয় শ্রমিক জোট, ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি, বিবর্তন সাংস্কৃতিক ফোরাম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, হাতেখড়ি, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, নবনাট্য সংঘ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সিপিবি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের শেষ পর্যায়ে উদীচীর পক্ষ থেকে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করা হয়। জীবনী ॥ তার পুরো নাম কিন্তু আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তার জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন। কামাল লোহানীর বাবা আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী। মা রোকেয়া খান লোহানী। সাত বছর বয়সে তার মা মারা যান। কামাল লোহানী দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। কামাল লোহানী ১৯৪৮ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে চলে আসেন পাবনায়। ভাষা আন্দোলনের বছর পাস করেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সে সময় থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ততা। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি প্রচলিত শিক্ষার ইতি টানেন। রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি চর্চাই এরপর তার সারাজীবনের সাধনায় রূপ নেয়। প্রথম গ্রেফতার হন ১৯৫৩ সালে। সে সময় পাবনার তৎকালীন জিন্নাহ্ পার্কে (বর্তমান স্টেডিয়াম) মুসলিম লীগ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সময় অন্য নেতাদের সঙ্গে নুরুল আমিনও এসেছিলেন। তার আগমণের প্রতিবাদে যে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী বিক্ষোভ করেন, তাদের একজন ছিলেন কামাল লোহানী। পাবনার রাজনৈতিক নেতা, এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হন। এরপর একাধিকবার তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকায় এসে যোগ দেন দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায়। এ বছরই তিনি ন্যাপে যোগ দেন এবং জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে তিনি আত্মগোপনে যান। ১৯৫৮ সালে কামাল লোহানী যুক্ত হন নৃত্যশিল্পের সঙ্গে। নৃত্যগুরু জি এ মান্নান ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ প্রযোজনা করলে কামাল লোহানী তাতে অংশ নেন। পরে, পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে যান তিনি। ১৯৬২ সালে স্বল্পকাল কারাবাসের পর কামাল লোহানী ‘ছায়ানট’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হন। সাড়ে চার বছর এই দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৬৭ সালের ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্বোধন হয় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে। আয়োজন করেন গণসঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘ধানের গুচ্ছে রক্ত জমেছে’। নাটক ‘আলোর পথযাত্রী’ পরিচালনা ও এতে অভিনয় করেন কামাল লোহানী। নৃত্যনাট্য ‘জ্বলছে আগুন ক্ষেতে ও খামারে’ বিবেকের ভূমিকায় নেচেছিলেন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কামাল লোহানী একজন শিল্পী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন। এ সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দায়িত্ব পান। ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ নামে একটি নতুন পত্রিকায় যোগ দিয়ে আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবার্তা’, এরপর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক হন। ১৯৭৮ সালে তাকে সম্পাদক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৮১ সালে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হলে ‘দৈনিক বার্তা’ ছেড়ে ‘বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট’ এ যোগ দেন। ১৯৯১ সালে তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ষোলো মাসের মাথায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি পিআইবিতে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতা জীবনে এছাড়াও তিনি দৈনিক আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টাও ছিলেন। ঢাবি উপাচার্যের শোক ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শনিবার এক শোক বাণীতে উপাচার্য বলেন, কামাল লোহানী ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, কণ্ঠযোদ্ধা, প্রথিতযশা সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনসহ বাঙালী সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। উপাচার্য আরও বলেন, কামাল লোহানী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীণ সাংবাদিক, প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অসাধারণ যোদ্ধাকে হারাল। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে উপাচার্য উল্লেখ করেন। উপাচার্য মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, কামাল লোহানী গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
×