ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফোরশোর গার্ড ফোর্স

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ২১ জুন ২০২০

ফোরশোর গার্ড ফোর্স

এবার দেশের নদ-নদীর দখল ও দূষণ প্রতিরোধে ফোরশোর গার্ড বাহিনী তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার তথা বিআইডব্লিউটিএ। এই বাহিনী গঠিত হবে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী জিআরপির আদলে। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকজন সদস্য নিয়ে গঠিত এই বাহিনী কাজও শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা পরিবেষ্টিত বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী রক্ষাকল্পে। উল্লেখ্য, দেশে পুলিশ, হাইওয়ে পেট্রোল পুলিশও আছে। আছে উপকূল রক্ষায় কোস্টগার্ড। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নদ-নদী দখল ও দূষণ একটি প্রায় নিয়মিত ব্যাপার, যা হয়ে আসছে বহুকাল ধরে ক্ষমতাবানদের দাপটে। সময় সময় এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদও হয়। তবে কিছুদিন পর আবারও দখল হয়ে যায়। নদীকে দূষণমুক্ত ও নাব্য রাখার জন্য ড্রেজিংসহ তলদেশ পরিষ্কার করা হয়। তবে রক্ষণাবেক্ষণসহ দেখভালের অভাবে যথা পূর্বং তথা পরং। সর্বশেষ দেশের সর্বোচ্চ আদালত নদ-নদী জীবনসত্তা এবং একে রক্ষণাবেক্ষণ করা অত্যাবশক বলে রায় দিলে সচেষ্ট ও সক্রিয় হয় সরকার এবং বিআইডব্লিউটিএ। নবগঠিত ফোরশোর গার্ড বাহিনী এক্ষেত্রে কতটা ফলপ্রসূ অবদান রাখতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী, সর্বোপরি দেশের সব নদী ও শাখা নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করে সারা বছর ধরে নাব্য রাখার জন্য সরকার একটি মাস্টারপ্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে একদিকে যেমন নদীমাতৃক বাংলাদেশের আবহমান চিরায়ত প্রকৃতি ও রূপ ফিরে আসবে, তেমনি নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ মানুষের যাতায়াতের পথ সহজ, সুগম ও সুলভ হবে। সরকার যে দেশের নদ-নদীকে সারা বছর ধরে নাব্য বজায় রেখে দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে সচেষ্ট এবং আন্তরিক তা ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যায় প্রায় নিয়মিতই চলছে উচ্ছেদ অভিযান। রাজধানীর বাইরেও এই উচ্ছেদ অভিযান চলমান। নদী দখল ও দূষণ প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নৌপথ সচলের পাশাপাশি সারা বছর নদীর নাব্য রক্ষাসহ সেচ সুবিধা ও চাষাবাদ অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সম্প্রসারিত হবে নিঃসন্দেহে। ইলিশসহ মাছের উৎপাদনও বাড়বে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, নদী না বাঁচলে বাঁচবে না বাংলাদেশ, ভারতও। সে অবস্থায় নদ-নদীর সুরক্ষায় দুই দেশেরই এগিয়ে আসা আবশ্যক যৌথভাবে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির সুসম বণ্টনও জরুরী।
×