ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক নৌবাহিনী

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ২১ জুন ২০২০

আধুনিক নৌবাহিনী

বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নতুন সংযোজিত যুদ্ধ জাহাজ ‘বানৌজা সংগ্রাম’-এর কমিশনিং প্রদানকালে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা এবং সম্পদ রক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নৌজাহাজটির জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানে লেবাননে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- সেই নীতি নিয়েই আমরা চলব। কাজেই যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা দরকার সেখানে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত থাকবে। শুধু নদীমাতৃকই নয়, বাংলাদেশ হলো সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ। ফলে এ দেশের নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনেক বেশি। সমুদ্র জয়ের পর দেশের সমুদ্রসীমা মোট স্থল আয়তনের তিন-চতুর্থাংশের সমান হওয়ায় নৌবাহিনীর কর্মপরিধি বহুগুণ বেড়েছে। কোন দেশের নৌবাহিনী যেসব রুটিন দায়িত্ব পালন করে থাকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে দায়িত্বের পরিসর কিছুটা বেশি। কেননা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের জন্য একটি স্বাভাবিক ও নিয়মিত বিষয়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও যথারীতি নৌবাহিনী প্রস্তুত ছিল। ‘আমফান’ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা নৌ-অঞ্চলে নৌবাহিনীর ২৫টি জাহাজ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কাজের জন্য নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট এবং দুটি হেলিকপ্টারও প্রস্তুত ছিল। বৈশ্বিক মহামারীর সময় আলাদাভাবে নৌবাহিনীর ওপর বিশেষ কর্তব্য না চাপলেও মানবিকতা ও সেবার মনোভাব থেকে নৌবাহিনী প্রশংসিত অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রথম থেকেই নানাভাবে করোনা মোকাবিলা কার্যক্রমে যুক্ত হয়। এর অন্যতম ছিল দেশের নানা প্রান্তে ত্রাণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেয়া ও বিতরণ। এছাড়াও সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় নৌবাহিনী জাহাজ এবং কন্টিনজেন্টসমূহ নিয়োজিত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র দুটি গানবোট নিয়ে নৌবাহিনীর কমান্ডোরা অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনার মাধ্যমে ছাব্বিশটি শত্রু জাহাজ ধ্বংস করার গৌরব অর্জন করেছিল। ‘শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়’ মূলমন্ত্র নিয়ে এদেশের নৌবাহিনী দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। প্রসঙ্গত, অভিযান পরিচালনার ধরন উপযোগী প্রয়োজনীয় সক্ষমতার একাধিক জাহাজ নির্মাণের বদলে একটি জাহাজেই একাধিক সক্ষমতা গড়ে তোলার অত্যাধুনিক মাল্টিমিশন শিপ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে উন্নত রাষ্ট্রসমূহ। বাংলাদেশের জন্যও এমন প্রযুক্তি প্রয়োগের চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ করতে হলে সমুদ্রকে সুস্থ রাখতে হবে। আর সেজন্য সমুদ্রদূষণ রোধে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া জরুরী। বাংলাদেশের সুবিস্তৃত সামুদ্রিক এলাকা মাছ, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও অন্যান্য অনাবিষ্কৃত খনিজে ভরপুর। জাহাজ নির্মাণ এবং জাহাজ পুনর্চক্রায়নেও এর রয়েছে বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিমরাড) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নৌবাহিনী প্রধান যথার্থই বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা সমুদ্রকে অবহেলা করেছি। এখন সমগ্র জাতিকে বুঝতে হবে যে, বঙ্গোপসাগরই হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত।’ আর এই ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও তা থেকে অর্জনের জন্য নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করা অপরিহার্য। আগামীতে ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার খাত থেকে দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে বেগবান করার লক্ষ্যে নৌবাহিনীর সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ থেকে শুরু করে গ্যাস-তেলসহ সমুদ্রের খণিজসম্পদ উত্তোলনের পরিকল্পনা নিয়ে সহায়ক শক্তির সমন্বয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া চাই। এরই মধ্যে অনেকটা সময় চলে গেছে। করোনার তা-ব থেমে যাওয়ার পর এই সার্বিক কাজে গতি আনা হবে-দেশবাসীর এমনটাই প্রত্যাশা।
×