ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মিল্টন বিশ্বাস

প্রধানমন্ত্রীর হার না মানার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ২০:২৬, ২০ জুন ২০২০

প্রধানমন্ত্রীর হার না মানার প্রত্যয়

১৫ জুন (২০২০) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি চাই আমাদের মানুষের মধ্যে যেন একটা আস্থা থাকে, বিশ্বাস থাকে, সেই বিশ্বাস-আস্থাটা ধরে রাখতে হবে। আমরা হার মানব না, মৃত্যু তো হবে, মৃত্যু যে কোন সময় যে কোন কারণে হতে পারে। কিন্তু তার জন্য ভীত হয়ে হার মানতে হবে? এ ধরনের একটা অদৃশ্য শক্তির কাছে এটা তো না। সেজন্য আমাদেরও সেভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’ এই হার না মানার প্রত্যয় গত ৩ মাসে শেখ হাসিনার করোনা-কর্মপঞ্জিতে প্রকাশ পেতে দেখেছি। শুরুর দিকে মহামারী সম্পর্কে তাঁর দেয়া ৩১টি নির্দেশনা ছিল সময়োপযোগী। ব্যাধিসৃষ্ট মহামারীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর হার না মানার প্রত্যয় বিভিন্ন কাজের মধ্যে ইতোমধ্যে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে। সঙ্কট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামতও নিয়েছেন; লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সমস্যায় না পড়ে সেজন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন তিনি। অর্থাৎ কেবল পরামর্শ ও নির্দেশনা নয় বাস্তবায়নযোগ্য অনেক কিছু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোজা ও ঈদ-উল-ফিতরের মধ্যে যখন করোনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ছোবলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। করোনা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মে মাস জুড়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন। ওই মাসে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে বলে, করোনাভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতিতেও উদীয়মান সবল অর্থনীতির ৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। অর্থাৎ নবম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেও পাকিস্তান, ভারত, চীন এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এদেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক কাজ সচল রাখার জন্য লকডাউন তুলে দেন শেখ হাসিনা। আসলে পুরোপুরি কঠোর লকডাউন এদেশে কখনো বজায় রাখা যায়নি। ২৫ মে ঈদের পর মানুষ কাজের জন্য শহরমুখী হয়। আর কল-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেও দেয়া হতে থাকে। মূলত সরকারের লকডাউনসহ বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যুর হার কিছুটা হলেও বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ৩১ মে বলেছেন, সকলে যদি স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলেন তাহলে নিজেকে, পরিবারকে, পাড়া প্রতিবেশীকেও আপনারা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। যাতে এই ভাইরাসটি আর বেশি করে সংক্রমিত হতে না পারে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি খালিচোখে দেখা না গেলেও এর এমন একটা শক্তি যে, সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনীতির চাকাসহ সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে এবং সেরকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের চলতে হচ্ছে। তবে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনকার মতো সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেই আমরা যে কোন আপৎকালীন অবস্থা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাব এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশব্যাপী বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের দুই মাসের সুদ মওকুফ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমি এ পর্যন্ত ১৮টি প্যাকেজ দিয়েছি। আর এটা নিয়ে হলো ১৯টি প্যাকেজ। যেহেতু নতুন প্যাকেজে গৃহীত ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে, যে সুদের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। সেই স্থগিত সুদের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। ফলে আনুপাতিক হারে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের আর তা পরিশোধ করতে হবে না। ইতোপূর্বে ঘোষিত প্যাকেজসমূহে ১ লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। যেটা আমাদের জিডিপির ৩ দশমিক ৭ ভাগ। ২ জুন তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ছুটির পর ৩১ মে থেকে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্যই বাংলাদেশে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। যারা দিন আনে দিন খায়, মধ্যবিত্ত, সকলের জীবনযাত্রা যেন সচল রাখতে পারে সেজন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ১০ জুন সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য সবকিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একদিকে যেমন করোনা মোকাবিলা করব, পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন যাতে চলতে পারে, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য করণীয় সব করব।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি মৃত্যুকে কখনও ভয় পাইনি, পাবও না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন। একদিন সেই জীবন নিয়েও যাবেন। মানুষকে কিছু দায়িত্ব, কিছু কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন আল্লাহ। সেই কাজটুকু করতে হবে। আল্লাহর লিখিত যে দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছে, যতক্ষণ এই কাজটুকু শেষ না হবে, ততক্ষণ কাজ করে যাব। কাজ শেষে আমিও চলে যাব। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমি এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি। সুতরাং, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর এই নির্ভীক চেতনার সঙ্গে আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ব্যাধি জয় করার প্রত্যয়। করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও ১১ জুন উপস্থাপিত বাজেটের আকার কমেনি, বরং বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ওই বাজেট। করোনা মহামারী থেকে সৃষ্ট সঙ্কটময় পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার গতিপথ নির্ণয়ে প্রণীত এবারের বাজেট। জীবন-জীবিকার ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী চিন্তার ফসল এবারের বাজেট। এবারের বাজেট করোনায় বিদ্যমান সঙ্কটকে সম্ভাবনায় রূপ দেয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর ইতোমধ্যে যে অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তাকেও একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট বলা যেতে পারে। ১৯টি প্যাকেজের কথা আগেই বলা হয়েছে। হার না মানার প্রত্যয়ে জয়ী হওয়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত এখন দেশবাসী। আর সংক্রমণ ব্যাধির ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবকিছুতেই কঠোর নজরদারি তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম কাজ। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন তিনি বেশি ব্যস্ত। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গেও। ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভিডিও কলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অতি জরুরী মনে হলে মিটিং-কনফারেন্স করছেন গণভবনে। প্রতিদিন সকাল থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেশের সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে মানুষের জীবিকা রক্ষার জন্য লকডাউন শিথিল করায় অর্থনীতির চাকা এখন কিছুটা গতিশীল হয়ে উঠেছে। তবে একথা সত্য দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় প্রশংসা পাবার জন্য শেখ হাসিনা কখনও কাজ করেন না। তাঁর কাজ জনগণের স্বার্থে নিবেদিত। তাঁর প্রত্যয় আত্মবিশ্বাসে মহিমান্বিত। লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×