ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতি ৫ জনে ১ জন ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ২০:১২, ২০ জুন ২০২০

প্রতি ৫ জনে ১ জন ঝুঁকিতে

করোনা সংক্রমণের পর্যায় ক্রমিক উর্ধগতিতে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ার দিকে, সুস্থ হওয়ার মানুষও কম নয়। সুতরাং অনেকে আক্রান্ত হলেও শারীরিক সক্ষমতায় রোগ প্রতিরোধ শক্তিতে অনেকেই করোনাকে জয়ও করছে। তবু কিছু বয়স্ক এবং অন্য রোগ-ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত মানুষ প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মূলত আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু সংখ্যা থেকেই এমন পরিসংখ্যান বিবেচনায় আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বের ১০০ শত ৭০ কোটি মানুষ হরেকরকম জটিল রোগে ভুগছেন। তারা যদি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হন তাহলে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেক বেশি। দেহের অভ্যন্তরে অন্য রোগের জটিলতায় প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি শারীরিক দৌর্বল্য ও বিপন্নতা তৈরি করে করোনা সংক্রমণের মোকাবেলায়। ‘দ্যালেনসেট গ্লোবাল হেলস’ জার্নালের এক গবেষণা নিবন্ধে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি প্রকাশ পায়। সারাবিশ্বে আক্রান্ত ও মৃত্যু আর হাতেগোনার অবস্থায় নেই। লাফিয়ে লাফিয়ে জ্যামিতিক হারে সংক্রমণ শুধু উর্ধগতিই নয়, প্রাণ ঝুঁকির ব্যাপারটিও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই কোভিড-১৯-এর প্রথম সংক্রমণ শুরু। এর পরে সারাবিশ্বে এর সর্বগ্রাসী প্রকোপ দৃশ্যমান হয়, যা এখন অবধি অব্যাহত রয়েছে। যদিও এখন আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যায় চীন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম, ১৯তম অবস্থানে। উল্লিখিত সাময়িকীটি আরও তথ্য দেয় বিশ্বের প্রতি পাঁচজনে একজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার চরম ঝুঁকিতে। অন্য একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদরোগ, এইডস এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় যারা ভুগছেন ও অপেক্ষাকৃত বয়স্ক তারা করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন বেশি। ফলে তারা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে শারীরিক সক্ষমতার অভাবে রোগটিতে কাহিল হয়ে পড়েন। প্রতিরোধের শক্তি কমে যাওয়ায় অন্য জটিল রোগে আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন। বিপদও সর্বোচ্চ মাত্রায়। গবেষণা প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট করা হয় প্রতিষেধক তৈরি হলে কাদের আগে দিতে হবে সেটা আমলে নেয়াও জরুরী। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ অনেক মুক্ত দেশ থেকে এখনও যায়নি। চীনে নতুন করে কোভিড-১৯ শনাক্ত হচ্ছে। করোনামুক্ত ঘোষণার পর নিউজিল্যান্ডে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত দুজনকে শনাক্ত করা হয়। বর্তমানে এশিয়া বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এই সংক্রমণের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকায় এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা এখন অবধি সম্ভব হয়নি। সঙ্গত কারণে সারাবিশ্বকে নাজেহাল করে দেয়া এ রোগটি প্রতিরোধে আরও সমন্বিত উদ্যোগ এবং সূক্ষ্ম নজরদারি অত্যন্ত জরুরী। সারাবিশ্বে সংক্রমিত এই রোগটির প্রতিষেধক, প্রতিরোধ ও নিরাময়ের বিষয়টিকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একযোগে মোকাবেলা করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই। সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৫ লাখের অধিক। মৃত্যু সাড়ে চার লাখের ওপর। সুস্থ হয়েছেন ৪৫ লাখ। জটিল অবস্থায় এখনও রোগটির সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন অর্ধ লাখেরও বেশি মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থা সবচেয়ে সঙ্কটজনক হলেও আক্রান্তের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থানও খুব ভাল নয়। ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি কিংবা অবরুদ্ধ বলয়কে পর্যায়ক্রমিকভাবে শুধু শিথিল নয়, অনেক ক্ষেত্রে তুলেও নেয়া হয়েছে, যা করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণের জন্য কোন উপযোগী সিদ্ধান্ত নয়। লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত হয়ে নতুন কার্যক্রম গ্রহণে প্রস্তুতিও চলছে। অনেক জায়গায় শুরুও হয়েছে। ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে এবং চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীতে লকডাউন কার্যক্রম চলছে। বাকি, জোনগুলো আক্রান্তের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে নতুন এই উদ্যোগ কিভাবে কার্যকর করা হবে তেমন নির্দেশনাও এখন অবধি কারও জানা নেই। প্রতিনিয়তই কোভিড-১৯ নিয়ে গবেষণা করা হলেও এর সর্বগ্রাসী বিস্তার রোধে তেমন কোন আভাস পাওয়া যায়নি। অনেকটাই এখনও অজানা। ভাইরাসজনিত এই রোগটি বাংলাদেশে অনেক আক্রান্তকে সুস্থতার স্বস্তিও দিচ্ছে। মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত পরিমিত হলেও বাড়ার আশঙ্কাও দৃশ্যমান হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা এখনও বিশ্বব্যাপী এক চরম আতঙ্কের বিষয়।
×