ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থময় অর্থকৌশল

প্রকাশিত: ২০:১১, ২০ জুন ২০২০

অর্থময় অর্থকৌশল

মানবসমাজের ওপর মহামারীর প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী। মানবকুলের একটা সামান্য অংশ মহামারীর কবলে পড়ে মৃত্যুবরণ করে, এটি এড়ানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। জীবিত বৃহত্তর অংশকে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয় টিকে থাকার জন্য। অর্থনীতির বিচারে বর্তমান সভ্যতায় সব রাষ্ট্র সমপর্যায়ের নয়। সম্পদ অনুযায়ী জনসংখ্যায়ও রয়েছে ভিন্নতা। তাই বৃহত্তর বিচারে মানবজাতি অভিন্ন হলেও দেশে দেশে ভিন্ন কৌশল অবলম্বনের প্রয়োজন পড়ে। মহামারীর কবল থেকে প্রথমত জীবন রক্ষাই সবচেয়ে বড় অভিপ্রায়। এরপরই হলো পঙ্গু অর্থনীতির মেরামত ও তাকে পুনরুজ্জীবন দান। বাংলাদেশের আয়তন ও সম্পদ অনুযায়ী নাগরিকের সংখ্যা ঢের বেশি। যাবতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার তাই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার জনকল্যাণমুখী বলেই আমরা চলমান করোনা মহামারীর একেবারে শুরু থেকেই দেখে আসছি সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার একের পর এক বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিয়ে চলেছে। চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অর্থবছর। আসন্ন অর্থবছরে যথারীতি ব্যয় নির্বাহ হবে সুপরিকল্পিত বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে। এখানেই সরকারের বিচক্ষণতা। আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তাবিত বাজেটে চারটি কৌশল নেয়া হয়েছে। এর বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও জীবন বাঁচাতেও বাজেটে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। শুধু করোনা মোকাবেলায় সোয়া লাখ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। করোনা থেকে জীবন বাঁচাতে নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুকূলে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দসহ আরও ১২ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। চলতি বাজেটের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের বরাদ্দ বেড়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। করোনার মতো অদৃশ্য দানবের সঙ্গে লড়াই করতে হলে চাই সঠিক পরিকল্পনা ও সাহসী উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে প্রয়োজন যথাযথ অর্থ বরাদ্দ। সরকার সেই কাজটিই করছে দক্ষতার সঙ্গে। করোনা মোকাবেলায় চারটি কৌশল হচ্ছে- সরকারী ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন, যাতে অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত হয় এবং দেশে-বিদেশে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় কৌশলটির উদ্দেশ্য হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া জনগণকে সুরক্ষা দেয়া এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। তবে এ কৌশলটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা দরকার, যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুকূলে নিয়মিত বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করবে সরকার। সুচিকিৎসা নিশ্চিতে নতুন জনবল নিয়োগ, হাসপাতাল নির্মাণ, ভ্যাকসিন ও টিকা আবিষ্কারে গবেষণা, করোনা পরীক্ষার কিট আমদানি, ওষুধ সহজলভ্য, পিপিই, গ্লাভস ও মাস্কসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদনসহ করোনা মোকাবেলায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে। সব মিলিয়ে আশা জাগানোর মতো মহাপরিকল্পনা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো যথার্থই বলেছেন যে, করোনা মোকাবেলায় বড় ফান্ড দরকার। বাজেটে থোক বরাদ্দ হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার বিষয়টি ভাল। তবে এ তহবিলের টাকাটা কিভাবে খরচ হবে সে বিষয়ে এখনই একটি যথোপযুক্ত পরিকল্পনাও করা দরকার। কারণ দেশে দ্রুত করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। দেশবাসী জানে সরকারের প্রতিটি অর্থ বরাদ্দ তখনই অর্থময় হয়ে ওঠে যখন মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। বলাবাহুল্য, এজন্য সততা, দক্ষতা ও অঙ্গীকারের প্রতি একনিষ্ঠ থাকার কোন বিকল্প নেই। মানুষের প্রত্যাশা দায়িত্বশীল সরকার সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অতীতের সব দুর্যোগের মতোই আস্থার স্বাক্ষর রাখবে এবং সাফল্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
×