ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুকের মাধ্যমে মানবসেবা

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২০ জুন ২০২০

ফেসবুকের মাধ্যমে মানবসেবা

আইটি ডট কম প্রতিবেদক ॥ ফেসবুক ইউজার মানেই নানারকম গ্রুপের মেম্বার। কখনোবা শুধু নারী সদস্যদের নিয়ে গার্লস গ্রুপ, কখনোবা ইকমার্সের দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য গ্রুপ। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের এসএসসি/ এইচএসসি ব্যাচ নিয়ে তৈরি গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্যরা প্রায় সবাই সবার পূর্ব পরিচিত। তাই তারা সবসময় নিজেদের মধ্যে নিজেদের সুখ দুঃখ বিভিন্ন সমস্যা শেয়ার করে থাকে। সবাই সবার সাহায্যে এগিয়ে আসে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান নিয়ে। এই মহামারীতে কিছু কিছু গ্রুপকে দেখা গেছে বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মাঝে খাবার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান বিতরণ করতে। এমনি একটি গ্রুপ এবার ঈদে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই গ্রুপটির নাম হলো অমৎধহর ঝপযড়ড়ষ ইধঃপয ৯৮। আজিমপুরে অবস্থিত অগ্রণী স্কুল ও কলেজের ৯৮ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধুরা মিলে এই গ্রুপ। ২০০৮ সালে অপেন করা এই গ্রুপের মোট সদস্য সংখ্যা মাত্র ১১৯ জন। তাদের অনেকেই দেশের বাইরে বসবাস করছেন। এবার এই ঈদে তারা নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এই গ্রুপের একজন সদস্য মাহমুদা আফরোজ লাকী। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি। মহামারীর একদম শুরুতেই সরকার যখন সরকারী ছুটি ঘোষণা করে তখন তিনি অনলাইনে ‘খোঁজ নিয়েছেন?’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি কওে দৈনিক আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। নিম্ন আয়ের পাশাপাশি মধ্যম আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উবার, পাঠাও চালক, অনলাইন ব্যবসায়ী, আত্মনির্ভরশীল ছাত্র ছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যারা লকডাউনের কারণে সঙ্কটে পড়েছেন কিন্তু লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছেন না তাদের নাম পরিচয় গোপন করে তাদের বাসায় গিয়ে রাতের অন্ধকাওে পৌঁছে দিয়েছে খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ‘খোঁজ নিয়েছেন?’- এর পক্ষ থেকে পুলিশ সদস্যরা। এডিসি লাকী ও মিরপুর ডিভিশনের এমন কাজের ঘটনাগুলো ফেইসবুকে বা নিউজে দেখে এবং তার মুখে শুনে তার অনলাইন গ্রুপের স্কুলের সহপাঠীরা আগ্রহী হয়ে ওঠে এই ঈদে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এমনই কিছু অসহায় পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে। এ বিষয়ে এডিসি লাকী বলেন, ‘প্রায় দশ বছর ধরে আমার স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে আদি এই গ্রুপ। বিভিন্ন আনন্দ অনুষ্ঠান, নিজেদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল আমাদের এই গ্রুপ। কিন্তু এ বছর একটি মহৎ কাজের মধ্য দিয়ে নতুন রূপ লাভ করেছে আমাদের এই ফেসবুক গ্রুপ। এখন থেকে প্রতিবছর আমরা এমন কিছু মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করব। এতে করে আমাদের গ্রুপটি অনেক গ্রুপের কাছেই অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে উঠবে। গ্রুপের একজন এডমিন ব্যারিস্টার শুভ্রা চৌধুরী জানান, ‘আমরা এই গ্রুপের মাধ্যমে আমাদের স্কুলের দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীদের মধ্যে বৃত্তি চালু করার কথাও ভাবছি। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হিসেবে তিনি মনে করেন তার ছাত্রছাত্রীরাও এমন উদ্যোগে আগ্রহী হয়ে উঠবে। গ্রুপের অপর এক সদস্য স্কয়ার হসপিটালের আর এম ও ডাঃ ফারজানা কবির জানান, ‘নিজের সাংসারিক ও কর্মজীবনের পাশাপাশি স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে এ গ্রুপে সময় কাটাতে খুব ভাল লাগে। কিন্তু এই ভাল কাজের অংশ হতে পেরে এবারের ভাল লাগাটা আর বেড়ে গেছে।’ এডিসি লাকী জনকণ্ঠের প্রতিনিধিকে বলেন, লকডাউনে বাসা থেকে তার কয়েক বন্ধু তাকে সহায়তা করেছে উপহারের আইটেম নির্ধারণে, হিসাব সংরক্ষণে, যাদের উপহার দেওয়া হবে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে। এখানে তার গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে তাদের কিছু আপনজন, বন্ধু এবং আত্মীয়রাও অংশগ্রহণ করেছেন। তারা যে ক্যাশ প্রদান করেছেন তার পরিমাণও দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছেন এক বন্ধুর ব্যবসায়ী আত্মীয়ের সহায়তায়। তিনি তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান। আসলে এভাবে যে কোন ভার্চুয়াল গ্রুপকে আমরা একটু শ্রম দিয়েই দেশের বা সমাজের কাজে লাগাতে পারি। তার জন্য ইচ্ছেটাই আসল। হাসি আনন্দের পাশাপাশি দেশ গঠনেও ভূমিকা রাখা সম্ভব এভাবে অনলাইন গ্রুপগুলোর মাধ্যমে।
×