ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় বছর পর শিরোপার হাসি নেপোলির

প্রকাশিত: ০১:২১, ১৯ জুন ২০২০

ছয় বছর পর শিরোপার হাসি নেপোলির

জাহিদুল আলম জয় ॥ কি লীগ, কি কাপ, কি সুপারকোপা সবখানেই একক রাজত্ব ছিল জুভেন্টাসের। যে কারণে ইতালির ফুটবলে অন্যান্য দল শিরোপার স্বাদ যেন ভুলেই গিয়েছিল! এক সময়ের পরাক্রমশালী দল নেপোলির অবস্থাও ঠিক এমন হয়েছিল। কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার সাবেক ক্লাব কিছুতেই সফল হতে পারছিল না। অবশেষে জুভেন্টাসের একক রাজত্বের অবসান হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। কেননা তুরিনের ওল্ডলেডিদের হারিয়েই কোপা ইতালিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিয়েছে নেপলসের ক্লাবটি। বুধবার রাতে রোমের স্টাডিও অলিম্পিকো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে ভাগ্য নির্ধারণী টাইব্রেকারে জুভেন্টাসকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে নেপোলি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য অমীমাংসিত ছিল। এটি কোপা ইতালিয়ায় ষষ্ঠ শিরোপা নেপোলির। এর ফলে ছয় বছরের মধ্যে প্রথম কোন শিরোপা জিতল তারা। ২০১৩-১৪ মৌসুমে সর্বশেষ কোপা ইতালিয়ার শিরোপাই জিতেছিল ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। সেবারও তারা হারিয়েছিল জুভদের। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনের দক্ষতায় খেলা টাইব্রেকারে নিতে সক্ষম হয় জুভেন্টাস। কিন্তু এখানে আর কারিশমা দেখাতে পারেননি বর্ষীয়ান এই গোলরক্ষক। প্রতিপক্ষের প্রতিটি শটে গোল হজম করেন তিনি। পক্ষান্তরে পেনাল্টি শূটআউটে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দুই ফুটবলার ডোবান আসরের রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসকে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড পাওলো দিবালা ও ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক দানিলো প্রথম দুই শটে গোল করতে ব্যর্থ হন। তাতেই কোণঠাসা হয়ে পড়া জুভরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পরের দুই শটে লিওনার্দো বোনুচ্চি ও এ্যারন র‌্যামসে লক্ষ্যভেদ করলেও তাতে কোন লাভ হয়নি। কেননা নেপোলির প্রথম চারটি শট নেয়া সবাই জালের দেখা পেলে জয় নিশ্চিত হয়ে যায় দলটির। দলটির পক্ষে গোলগুলো করেন লরেঞ্জো ইনসিগনে, মাটেও পলিটানো, নিকোলা মাকসিমোভিচ ও আরকাডুইজ মিলিক। পুরো ম্যাচে ব্যর্থ জুভেন্টাস তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর দলের পঞ্চম পেনাল্টি কিক নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় আগেই দলের হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় সিআর সেভেনের আর শটই নেয়ার সুযোগ হয়নি। এর ফলে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো টানা দুই ফাইনালে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছেন পর্তুগীজ সুপারস্টার। ২০১৯ সালের শেষদিকে ইতালিয়ান সুপারকোপার ফাইনালে ল্যাজিও’র কাছে হেরেছিল জুভেন্টাস। এবার কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে হার নেপোলির কাছে। ম্যাচের শুরুর দিকে অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি নেপোলি। আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে জুভেন্টাস। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেন রুইজ, ক্যালজান, ইনসিগনেরা। অবশ্য প্রথমার্ধে পাল্টা আক্রমণে দু’টি ভাল সুযোগ পায় জুভরা। কিন্তু কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন রোনাল্ডো। ভাগ্য সহায় থাকলে ২৬ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত নেপোলি। কিন্তু ইনসিগনের অসাধারণ ফ্রিকিক পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। বিরতির ঠিক আগে ইতালিয়ান এই ফরোয়ার্ডের প্রচেষ্টা কোনমতে ফিরিয়ে দেন প্রায় ৪৩ বছরের বুড়ো গোলরক্ষক বুফন। বিরতির পর প্রায় পুরোটা সময়ই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলে নেপোলি। কিন্তু ভাল সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেনি তারা। বিশেষ করে খেলার অন্তিম মুহূর্তে গোল পেতে পেতেও পায়নি ম্যারাডোনার সাবেক ক্লাব। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে সার্ব ডিফেন্ডার নিকোলা মাকসিমোভিচের হেড দারুণ নৈপুণ্যে ফিরিয়ে দেন বুফন। ফিরতি বলে মিডফিল্ডার এলমাসের শট আবারও প্রতিহত করেন বিশ্বকাপ জয়ী গোলরক্ষক। ফলে বড় বাঁচা বেঁচে যায় জুভেন্টাস। এরপর খেলা টাইব্রেকারে গড়ালে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি তুরিনের বুড়োদের। ম্যাচ শেষে শিষ্যদের প্রশংসায় ভাসান নেপোলি কোচ জেনারো গাট্টুসো। তিনি বলেন, আমি গর্বিত এমন একটি দল পেয়ে। সবাই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছে। অন্যদিকে সাবেক ক্লাবের কাছে হেরে বেদনায় ভারাক্রান্ত জুভেন্টাস কোচ মাউরিসিও সারি। তিনি দলের সেরা তারকা রোনাল্ডোর পারফর্মেন্সে হতাশা প্রকাশ করেন। ফাইনালে হারের কারণে সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে যে অভিজ্ঞতা হয়নি সেটা হয়ে গেছে রোনাল্ডোর। ক্যারিয়ারে ৩০তম শিরোপার লক্ষ্যে মাঠে নামলেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। পুরো ম্যাচেই বিবর্ণ ছিলেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। প্রায় দেড় যুগের পেশাদার ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত চারটি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবে খেলছেন রোনাল্ডো। কোন ক্লাবের হয়েই টানা দুই ফাইনালে হারেননি তিনি। ইতালিতে গিয়ে সেই অভিজ্ঞতাটা হয়ে গেল সিআর সেভেনের।
×